
ইসরাইল ১৫ মাস ধরে মিথ্যা প্রচারণার মধ্য দিয়ে গণহত্যার পক্ষে পশ্চিমাদের সমর্থন টিকিয়ে রেখেছিল। ইসরাইল হামাসের প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে গিয়ে গুরুতর যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) অনুসারে, ইসরাইলি নেতারা একটি নতুন যুদ্ধের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যার দ্বিতীয় ধাপ বলতে সাধারণত ইসরাইলি বাহিনীর ফিলিস্তিনের গাজা, ওয়েস্ট ব্যাংক এবং পূর্ব জেরুজালেমে চলমান আক্রমণ, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকে বোঝানো হয়। বিশেষ করে ২০২১ সালে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ সংঘর্ষের পর, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের তরফ থেকে এ ধরনের গণহত্যার অভিযোগ ওঠে।
ইসরাইলের কাছে সব ধরনের কার্ড আছে। তবু পাথরের মতো কঠিন পশ্চিমা সমর্থন এবং জনসংযোগ থাকা সত্তে¡ও তারা যুদ্ধে জয়ী হতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স¤প্রতি হামাসকে দায়ী করে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তিকে ‘অপমানজনক’ ও ‘নিন্দনীয় অনুষ্ঠান’ বলেছেন। বিবিসিসহ পশ্চিমা মিডিয়া ইসরাইলকে প্রতিধ্বনিত করে বলেছে, ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ১৩০ জনের হত্যাকাÐ ইসরাইলিদের নরহত্যার চেয়ে গুরুতর আইনি লঙ্ঘন ছিল। মিডিয়া একইভাবে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের নতুন পদক্ষেপকে হালকাভাবে তুলে ধরেছে। হাজার হাজার বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো স¤প্রদায়কে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে। পশ্চিমা মিডিয়া পরিসরগুলো লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে, এই যুদ্ধাপরাধও যুদ্ধবিরতি চুক্তির চরম লঙ্ঘন।
ইসরাইলি আক্রমণ এবং ফিলিস্তিনিদের অবস্থা
২০১৪ সালের গাজার যুদ্ধের পর থেকে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক অভিযান চলতে থাকে। তবে ২০২১ সালের মে মাসে যে যুদ্ধটি শুরু হয়, তা ছিল ব্যাপক আক্রমণাত্মক এবং প্রভাবশালী। ২০২১ সালে গাজা শহরে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা, স্থল বাহিনীর অভিযান এবং রকেট হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং আহত হন, বিশেষ করে বেসামরিক জনগণের মধ্যে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যেমনÑ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরাইলের এই কর্মকাÐকে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
২০২৩-২০২৪ সালের পরিস্থিতি
২০২৩ সালের পর থেকে গাজার পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালে ইসরাইলি বাহিনী আবারও গাজা অঞ্চলে বিমান হামলা শুরু করে এবং সেখানে প্রচÐ ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। সেসময়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলো, বিশেষ করে হামাস ইসরাইলের দিকে রকেট ছুঁড়তে থাকে, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ, এটি জাতিগত দমনপীড়নের মধ্যে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের আকার ধারণ করতে পারে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার অভিযোগের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই সংঘাতের তীব্র নিন্দা প্রকাশ পাচ্ছে। কিছু দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করলেও, অনেক পশ্চিমা দেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক আদালত এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এ ধরনের কর্মকাÐের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে পরিস্থিতির কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং মানবাধিকার সংস্থা একাধিকবার সতর্ক করেছে যে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে ধরনের দমন-পীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে, তা আন্তর্জাতিক আইন এবং চুক্তির পরিপন্থি।
সা¤প্রতিক পরিস্থিতি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে টানা ১৫ মাস গাজায় নির্বিচার হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এরই মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর গত ১৯ জানুয়ারি উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে সম্প্রতি গাজায় আবার হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। নতুন করে শুরু করেছে স্থল অভিযান। বর্বর ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের আহŸান উপেক্ষা করেই ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় গত কয়েক দিনের হামলায় দুই শতাধিক শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল–ইউনিসেফ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত কয়েক দিনে নিহত হয়েছেন ৬৩৪ ফিলিস্তিনি। সব মিলিয়ে গত ১৭ মাসে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার। আর আহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এরপরও ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নির্মূল করতে তাদের এ হামলা।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখন একেবারেই সংকটাপন্ন। হাসপাতাল, স্কুল, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানির উৎসগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া সেখানে খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সেবার অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমনকি সেখানে পবিত্র রমজান মাসেও খাদ্য সহায়তার জন্য কোনো ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে না দখলদার ইসরায়েল। ফলে সেখানে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফিলিস্তিনে গণহত্যার পরবর্তী ধাপ কী হবে, তা অনেকাংশে এই সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের ওপর নির্ভর করবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান সমাধান বা শান্তির পথ দেখা যাচ্ছে না।
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়