ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

ধর্ষণ আইন সংশোধন

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২২ মার্চ ২০২৫

ধর্ষণ আইন সংশোধন

সম্প্রতি মাগুরার শিশুটির ধর্ষণোত্তর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে গোটা দেশে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১৭ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে  উপদেষ্টা পরিষদ। সংশোধিত আইনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শিশু ধর্ষণ মামলার আলাদাভাবে বিচার করা যাবে। ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময়ও কমিয়ে আনা হয়েছে। কোনো বিশেষ বাস্তবতায় আদালত যদি মনে করেন, ডিএনএ পরীক্ষার সনদ ছাড়াই চিকিৎসা সনদ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার সম্ভব, তাহলে আদালত ডিএনএ সনদ ছাড়াই বিচার করতে পারবেন।
ধর্ষণের সংজ্ঞা বৈষম্যহীন করতে নারী ও শিশু শব্দের পরিবর্তে ‘ব্যক্তি’ লেখার দাবি উঠেছে। নারী ও মেয়েশিশুর মতো পুরুষ, ছেলেশিশু, হিজড়াসহ যে কোনো লিঙ্গের ব্যক্তির অসম্মতিতে নিপীড়নকে ধর্ষণ বলে গণ্য করতে বলা হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ভুক্তভোগীর চরিত্রগত সাক্ষ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, ভুক্তভোগীর জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়। ২০১৮ সালে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট তৈরি হয়। ধর্ষণের ধারায় সংশোধন আনতে জোটটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলেও আইন সংশোধনের সময় জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের মতামতও নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশে কোনো এক বা একাধিক ঘটনা ঘটলেই তড়িঘড়ি আইন সংশোধন করার এক সংস্কৃতি বহুকাল আগে থেকেই চলে আসছে। সেক্ষেত্রে এটা বিবেচনা করতে হবে, যত্রতত্র আইন সংস্কার করা কতটা কল্যাণকর জাতির জন্য? একজন বিচারপতি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে অবশ্যই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হতে পারে। তারপরও বৈশ্বিক বাস্তবতার নিরিখে আঞ্চলিক পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধন কিংবা সংস্কারের প্রয়োজন হয়Ñ এটি বাস্তবতা। ধর্ষণসহ যে কোনো আইন সংশোধন অথবা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও সুবিধাভোগীদের সরাসরি অংশগ্রহণও বাঞ্ছনীয়। ধর্ষণ আইনে সংস্কার দরকার। দেশের দণ্ডবিধি থেকে ধর্ষণের সংজ্ঞা নেওয়া হয়েছে। সময় বদলেছে, অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সাক্ষী সুরক্ষা অগ্রাধিকার দিয়ে যথা সময়ে তদন্ত শেষ করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিও যেন ন্যায় বিচার পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ প্রমাণ করেই শাস্তি দিতে হবে তাকে। দেশের প্রতিটি শিক্ষাস্তরে সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা অতি গুরুত্বের সঙ্গে পাঠদান করাতে হবে। তবেই আইন সংস্কার আলোর মুখ দেখবে। মনে রাখতে হবে যে, একটি ছেলে ধর্ষক হয়ে জন্মায় না- এ দায় সমাজের সবার।

×