ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

রেমিটেন্স যোদ্ধাদের রমজান

মোছা. রোকেয়া সুলতানা

প্রকাশিত: ১৯:১৩, ২২ মার্চ ২০২৫

রেমিটেন্স যোদ্ধাদের রমজান

রমজান মাসে যখন সারা দেশের মানুষ ধর্মীয় কর্তব্য পালনে ব্যস্ত, তখন দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা রেমিটেন্স যোদ্ধারা ভিন দেশে নিজেদের রোজা রাখার পাশাপাশি প্রেরণ করছে দেশের জন্য এক অমূল্য অর্থনৈতিক সুরক্ষা। প্রায় কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশী বিদেশে কর্মরত, যাদের রেমিটেন্স প্রতি বছর দেশের অর্থনীতিতে যোগ করে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু রমজান মাসে তাদের জন্য সবকিছুই হয়ে ওঠে আরও কঠিন। বিশ্বের নানা দেশে কর্মরত রেমিটেন্স যোদ্ধারা রমজান মাসে যে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যান, তা যেন এক যুদ্ধ। সারাদিন রোজা রেখেও তাদের প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। পবিত্র রোজা রাখার পাশাপাশি, বিদেশে একাকী জীবনযাপন এবং শারীরিক পরিশ্রম তাদের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় কাজের চাপে তারা ঠিকমতো ইফতারও করতে পারেন না। কাজের চাপ, একাকীত্বÑ এগুলো তাদের জন্য নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। তবুও, তারা তাদের পরিবারের জন্য পাঠান রেমিটেন্স। যেন দেশে থাকা পরিবারগুলো ইফতার করতে পারে ভালো খাবার দিয়ে এবং ঈদে নতুন জামা কিনতে পারে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন, তাদের রোজার প্রস্তুতি এবং ঈদের খুশি সব কিছুই তাদের জীবনের অংশ। তাদের কাছে রমজান শুধু ধর্মীয় দায়িত্বই নয়, এটি তাদের পরিবারকে সুখী করার আরও একটি সুযোগ। তারা জানেন, যে টাকা তারা পাঠাচ্ছেন, তাতে তাদের পরিবার অত্যন্ত সুন্দরভাবে ঈদ কাটাতে পারবে। অথচ, তাদের নিজের ঈদের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশে আসে অর্থÑ যা দেশের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। কিন্তু এই শ্রমের বিপরীতে তারা কখনোই প্রকৃত প্রশংসা বা স্বীকৃতি পান না। এর পরিবর্তে তাদের ওপর চাপ চলে আসেÑ দেশের অভ্যন্তরে অথবা বিদেশেÑ তারা নিজেদের প্রয়োজন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন।

রমজান মাসে যখন আমরা পরিবারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইফতার করি, তখন রেমিটেন্স যোদ্ধারা ভিন্ন পরিবেশে নিজেদের কর্মজীবন ধর্মীয় কর্তব্য পালনে ব্যস্ত। তারা জানেন, তাদের প্রেরিত অর্থ দেশের একটি বড় অংশের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের নিজের ঈদের আনন্দ কোথায়? এটা আমাদের দেশীয় সমাজের মর্মপীড়ার এক চিত্র, যেখানে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের উপেক্ষা করা হয়, অথচ তাদের অবদান অমূল্য। রমজান মাসে, এসব যোদ্ধার প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা দেখানোর সময় এসেছে। আমাদের উচিত, তাদের ত্যাগ এবং সংগ্রামকে স্বীকার করা। তাদের কাজের গুরুত্ব বুঝে একটু ভালোবাসা এবং সহানুভতির হাত বাড়ানো। একজন রেমিটেন্স যোদ্ধার রমজানÑএটি শুধু তাদের সংগ্রামের গল্প নয়, এটি এক মর্মস্পর্শী দৃশ্য। যেখানে একদিকে রয়েছে অবিরাম পরিশ্রম, অন্যদিকে রয়েছে আত্মত্যাগ এবং সবশেষে, পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসা।

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ

×