
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। পঞ্চগড়েই রয়েছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি জাদুঘরÑ রকস মিউজিয়াম, যা পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অভ্যন্তরে অবস্থিত। ১৯৯৭ সালের ১ মার্চ পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ নাজমুল হকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হয় জাদুঘরটি। ধারণা করা হয় উত্তরাঞ্চলের প্রায় চার-পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জীবন্ত হয়ে রয়েছে এ মিউজিয়ামে। এ জাদুঘরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিলা। যেমনÑ আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, গ্রানাইট, বেলে পাথর, চুনা পাথর, ১০ রকমের বালি ও ৮ রকমের মাটির নমুনা। আরও রয়েছে ১ কোটি বছরের পুরনো কঠিন শিলা। এছাড়াও রয়েছে পাথরের তৈজসপত্র, পাথরের হাতিয়ার। জেলার ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস ও উপকরণও সংগ্রহে রয়েছে। হাজার বছরের পুরনো ইমারতের ইট পাথরের মূর্তি এবং টেরাকোটা রয়েছে এখানকার সংগ্রহশালায়। ৩০০ বছরের পুরনো শাল গাছের তৈরি ২টি নৌকা রয়েছে এই মিউজিয়ামে, যা ৩৫ ফুট ও ২৫ ফুট লম্বাকৃতির। বাঁশের ওপরে তৈরি করা বিভিন্ন শিল্পকর্ম এই জাদুঘরে রয়েছে, যা সচরাচর দেখা যায় না।
প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশের একমাত্র এ পাথরের সংগ্রহশালা দেখতে ভিড় জমান পর্যটকরা। কিন্তু জাদুঘরটি সংরক্ষণ করার দায়িত্বে কেউ নেই বলে সংগৃহীত জিনিসগুলোর ওপরে ধুলোবালি জমে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। সরকারি বিএল কলেজের (খুলনা) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেখানে পরিদর্শন করতে গিয়ে জানান, প্রতিটি জিনিসে ময়লার স্তর জমে আছে, মাকড়সা জাল বুনেছে এবং শোকেসের কাঁচ ভাঙা। তাছাড়া নেম প্লেট লাগানো নেই জিনিসগুলোর গায়ে। শুধু বাংলাদেশই নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র পাথরের জাদুঘর। দেশীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে এবং জাদুঘরের প্রতিটি জিনিসের মান রক্ষার জন্য এটি সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিছু পাথর বাইরেই খোলা মাঠের ওপরে রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়। সেগুলোকেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ও লোক নিয়োগ করতে হবে তদারকির জন্য। সরকারের উচিত বিষয়টি বিবেচনা করা। জেলা প্রশাসনকেও উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানাই। সর্বোপরি বলতে চাই, রকস মিউজিয়াম আমাদের গর্ব। এটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
বিলকিস নাহার মিতু
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা