ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

নারীর প্রতি সহিংসতার উৎস ও আর্থিক ক্ষতি

ড. মো. আইনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২০ মার্চ ২০২৫

নারীর প্রতি সহিংসতার উৎস ও আর্থিক ক্ষতি

কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উড়াল ট্রেনে উত্তরা থেকে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রে যেতে যেতে বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-সহিংসতাবিরোধী সভা-সমাবেশ-মিছিল দেখতে দেখতে ভাবছিলাম– বড় অদ্ভুত আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। মাকে আমরা প্রাণপণ ভালোবাসী, মায়ের জন্য প্রাণ দিতে পারে না এমন পুরুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অথচ স্ত্রী-কন্যা ও অন্য নারীকে আমরা দেখি ভিন্ন চোখে। ফলে মানব প্রগতি ভাবনায় নারীকে বাদ দিয়েই সব পরিকল্পনা করি। এ পথ ধরেই ঘরে-বাইরে আমরা কন্যা সন্তানদের খুব জোরে কথা বলতে নিষেধ করি, তাদের খুব বেশি স্বাধীনতা দিতে নিষেধ করি, বৈবাহিক ধর্ষণ প্রসঙ্গ এলে রসিকতা করি, দৈনন্দিন ব্যবসা-বাণিজ্য ও কথোপকথনে নারীকে যৌনতার বস্তু বানাই, এমনকি দিনে-রাতে প্রকাশ্যে পথেঘাটে নারীর চিৎকার শুনলেও চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের মতো করে চলে যাই। কখনো ভেবে দেখি না যে, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক এই নারীদের সহিংসতার আতঙ্কে ফেলে এবং তাদের অমূল্য সম্ভাবনা বাদ দিয়ে কিভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ ও টেকসই হবে। কিংবা কিভাবে নারীদের যথাযোগ্য সম্মান-মর্যাদা না দিয়ে আমার-আপনার ছেলে সন্তানটির জন্য মর্যাদাশীল ও উন্নত এক বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। আমরা কখনো চিন্তাও করি না, দেড় দশক আগের বিবিএস-ইউএনএফপিএর তথ্য অনুযায়ী, শুধু নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে প্রত্যক্ষ খরচ বিবেচনায় বাংলাদেশ বার্ষিক মোট  দেশজ উৎপাদনের  আনুমানিক ২.১ শতাংশ (বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের বৈশি^ক গড় ২.৩-৫ শতাংশ) হারাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক গড়ের সঙ্গে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপির অর্থাৎ আনুমানিক ৪৮১.৮৬ বিলিয়ন ডলার (নমিনাল) ও ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি-পিপিপি) এবং মাথাপিছু জিডিপি ২,৭৭০ ডলার (নমিনাল) ও ১০,৩৭০ ডলার (পিপিপি)-এর হিসাব করলে দেখা যায় প্রতিবছর আনুমানিক ২০-৩০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের জিডিপি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শুধু নারীর প্রতি সহিংসতার প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ খরচের মাধ্যমে। বাস্তবে কয়েক বছর ধরে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল রাখাটাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি জাতি হিসেবে নিঃসন্দেহে খুবই লজ্জার।
অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পর্যালোচনার আগে বাংলাদেশে নারীদের চরম অবমাননার উৎসের সন্ধানে কিছু বলা প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের নরম-মোলায়েম পরিচালনা ব্যবস্থা ও অসহায়ত্ব-দুর্বলতার পাশাপাশি বিগত শাসকদের ঘৃণ্য অপকর্মে সহযোগী হয়ে বলহীন ও ভীতু হয়ে পড়া পুলিশ বাহিনীর ভঙ্গুরতার সুযোগে দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার তীব্রতা বেড়েছে। কিন্তু এটি এমন নয় যে, এখন এসব সৃষ্টি-উদ্ভব কিংবা ব্যাপকতা পেয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বিশেষত ১৯৯১-পরবর্তী প্রতিটি রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সরকারের সময় থেকেই নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতার হার কেবল বেড়েই চলেছে। শুধু দরিদ্র পরিবারই নয়, মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত সব পরিবারেই একই অবস্থা। তালাকের হার বেড়ে যাওয়াই এর প্রমাণ। বিচ্ছেদ সংক্রান্ত সালিশি পরিষদ ও বিবিএসের হিসাব বলছে, পুরুষদের চেয়ে নারীরাই বিচ্ছেদে উদ্যোগী বেশি। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স অনুযায়ী ২০১১ সালে দেশে তালাকের স্থূলহার ছিল প্রতি হাজারে ০.৭, যা ২০২১ সালে হয়েছে ১.৪। যার মধ্যে আবার গ্রামে তালাকের প্রবণতা বেশি, প্রতি হাজারে ১.৫ এবং ১ জন করে। এ ছাড়া রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে সংসার ভাঙছে ৫০টির বেশি। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য ও মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৬৮টি, আর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৭৬টি। অপরদিকে ২০২৪ সালের মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ১৫ জন নারী-শিশু, যা চলতি বছরের হিসাবে ২৬। তবে অত্যন্ত লজ্জার ও দুঃখজনক হচ্ছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৪২ জন নাবালিকা ধর্ষিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জনই দলবদ্ধভাবে। উদ্বেগজনক খণ্ডিত এই চিত্রের উৎসমূলে গেলে দেখা যায়, দেশে নারী জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা তাদের ক্রমাগত সহিংসতার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ, এটি প্রমাণিত যে একটি শিশুর বিকাশের শুরুটা হয় তার জন্মের আগেই মাতৃগর্ভে। কিন্তু দেশে মাতৃগর্ভে পুষ্টিহীনতা শিশুর সুস্থ কোষ সৃষ্টি ও তার বিকাশে মূল অন্তরায়। যার নেতিবাচক প্রভাব চলে বংশপরম্পরা ধরে। এর অর্থ হচ্ছে, অবক্ষয়ক্লিষ্ট সমাজব্যবস্থার সবচেয়ে বড় শিকার হয়ে নারী-শিশুর ওপর দিয়ে ধর্ষণসহ নানাবিধ সহিংসতা-অত্যাচারের যে ব্যাপকতা দেশ এখন প্রত্যক্ষ করছে, তা আসলে নারীর মাতৃত্বকালীন অবহেলা-অসম্মানসৃষ্ট শিশুর মাতৃগর্ভকালীন পুষ্টিহীনতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে মোট নারী-জনসংখ্যা ৮ কোটি ৫০ লাখ, যারা ৪ কোটি ১৮ লাখ ৭২ হাজার খানায় বাস করেন। এদের মধ্যে ৩ কোটি ৪০ লাখ খানা দরিদ্র এবং ১ কোটি ৬৭ লাখ নিরঙ্কুশ দরিদ্র। দরিদ্র এসব খানা দেশের মোট খানার ৪০ শতাংশ, কিন্তু তাদের হাতে আছে দেশের খানার মোট আয়ের মাত্র ৬.১২ শতাংশ। আর্থসামজিক শ্রেণি মইয়ের সবচেয়ে নিচে ১ কোটি ৪ লক্ষ ৬৮ হাজার চরম বঞ্চিত বা হতদরিদ্র খানায় বাস করেন ২ কোটি ১৩ লাখ নারী, যা দেশের মোট খানার ২৫ শতাংশ এবং এদের হাতে আছে দেশের খানার মোট আয়ের মাত্র ১.৫১ শতাংশ। দেশে নারীর পুষ্টি ও দারিদ্র্যের উল্লিখিত পরিসংখ্যানের সঙ্গে সমাজবিজ্ঞানীদের কিছু অভিমতও বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তাদের মতে, সর্বদাই মুনাফা ও লোভ-লালসানির্ভর আমাদের দুর্বৃত্তায়িত পুঁজি ও ভোগবাদী সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহারের ইচ্ছা, লিঙ্গবৈষম্য ও নারীর প্রতি অবমাননাকর মনোভাব, সহিংসতা ও আগ্রাসনকে উৎসাহিত করা সামাজিক পরিবেশ, আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও অপরাধীদের শাস্তি না-হওয়া, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, শিশুর সহিংসতাপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা, পর্নোগ্রাফির অত্যধিক ব্যবহার, বন্ধুদের খারাপ সঙ্গ, মাদকাসক্তি প্রভৃতি কার্যকারণ সমাজে ধর্ষকামী মানসিকতার বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে। জিন বা কোষবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমাজে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধ বিস্তারের জন্য বংশ ও পরিবার থেকে পাওয়া ‘শয়তান’ জিনের বড় ভূমিকা আছে। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা যৌথভাবে ইতিহাসের দীর্ঘতম সময় ধরে (১৯৭৩-২০০৯ সময়কাল বা ৩৭ বছর) ২১ হাজার ৫৬৬ জন দোষী সাব্যস্ত পুরুষ ধর্ষক ও নারী নির্যাতককে নিয়ে করা এক গবেষণায় নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন। যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত পুরুষদের ভাই ও বাবাদের সাধারণ জনগণের তুলনায় ধর্ষণ বা হামলার মতো অপরাধ করার সম্ভাবনা ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি। তাদের মতে, ৪০ শতাংশ নারী ধর্ষণের ঘটনার পেছনে জিন বা মানবকোষ (পারিবারিক ইতিহাস) দায়ী, আর বাকি ৬০ শতাংশ দায় ব্যক্তি ও সমাজ পারিপাশ্বির্কতার।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বাংলাদেশে বিস্তর আইনের পাশাপাশি প্রয়োগেও বিস্তর সমস্যা বিদ্যমান। জ্ঞানাভিজ্ঞ মহলের মতে, আইন ও প্রয়োগ সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে, পারিবারিক সম্মান ও ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদদের অর্থবহ আইন পাসে অস্বীকৃতি, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের নির্যাতনের কথা শুনে কারণ জানতে চাওয়ার সংস্কৃতি, বিচারকদের প্রমাণের দুর্বলতায় লঘু দণ্ডের ব্যাপ্তি, সাংবাদিকদের ধর্ষণের খবরে টুইস্ট জুড়ে দেওয়ার যুক্তি, পরিবার-গুরুজন ও শিক্ষকদের উটকো ঝামেলা এড়াতে শালীন পোশাকের জন্য পীড়াপীড়ি, আর নিয়োগকর্তাদের নারীর জন্য সুনির্দিষ্ট ভূমিকা ও রক্ষাকবচ তৈরিতে ব্যয় নির্বাহে অস্বীকৃতি জানিয়ে নারীকর্মী নিয়োগ থেকে দূরে থাকার গভীর অভিসন্ধি। সত্যিকার অর্থে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা সম্মিলিতভাবেই সমাজে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য-অসমতা ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে নারী ও শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-নিগ্রহের বিস্তার ঘটাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ দেশ ৫৪ বছর ধরে বারবার শূন্য থেকে শুরু করে আবারও ফিরে আসছে শূন্যে। কিন্তু এসব করে আমরা দেশের অর্থনীতির অপরিমেয় ক্ষতি করছি, যা বহন করতে বাধ্য হচ্ছে রাষ্ট্র, ভুক্তভোগী, অপরাধীর পরিবারসহ সাধারণ প্রতিটি মানুষকে।
সামগ্রিকভাবে আর্থিক ক্ষতির প্রকৃত পরিমাপ অত্যন্ত কঠিন; তা সে নির্যাতনের শিকার নারীর আবেগগত ও মানসিক ক্ষতির ক্ষেত্রেই হোক কিংবা চারপাশের সমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবই হোক। তবে কিছু ক্ষতি সহজেই নিরূপণযোগ্য। যেমনÑ প্রত্যক্ষ খরচের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চিকিৎসা খরচ (আঘাতের ফলে প্রারম্ভিক চিকিৎসার বিল, মনো-সামাজিক নিরাময় বিল ও দীর্ঘকালীন ওষুধ-পথ্য), আইন-পুলিশ খরচ, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতির কারণে আয়ের ক্ষতি। আর পরোক্ষের মধ্যে রয়েছে নারীর কর্মদিবস হারানোর কারণে কার্যকর চাহিদার হ্রাস, আয় ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযোগের মাধ্যমে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হ্রাস, শিক্ষা-কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে নারীদের সুযোগ সীমিত করে দেওয়ার আর্থিক ব্যয়। এসব প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ খরচের নানাবিধ হ্রাস-বৃদ্ধি আবার আন্তঃনির্ভরতার কারণে মোট জিডিপিতেও বড় আঘাত হানছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির কিছুটা অনুমান করা যায় বিশ্ব প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে। যেমনÑ ভিয়েতনামে প্রত্যক্ষ ও হারানো আয়ের সম্মিলিত খরচ জিডিপির প্রায় ১.৪১ শতাংশ এবং সহিংসতার শিকার নারীরা সাধারণ নারীদের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কম আয় করেন। মিসরে শুধু বৈবাহিক সহিংসতায় বেঁচে যাওয়া নারীর সেবাতেই ব্যয় হয় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মরক্কোতে নারীর ওপর যৌন সহিংসতার মোট বার্ষিক খরচ ২.৮৫ বিলিয়ন দিরহাম (প্রায় ৩০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ২০১৬ সালের জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে বাংলাদেশে শুধু পারিবারিক সহিংসতার কারণেই খরচ হয়েছে ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ছিল জিডিপির ২.১ শতাংশ এবং ওই বছরের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বাজেটের প্রায় সমান। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের যৎসামান্য ক্ষতিচিত্র অনুযায়ী নিঃসঙ্কোচে বলা যায়, সামগ্রিকভাবে নারী ও শিশুসংশ্লিষ্ট ধর্ষণ-সহিংসতার বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিতভাবেই বহু বহু গুণ বেশি হবে, যা যতটা সম্ভব উদ্ঘাটন করা আমাদের অবশ্য-কর্তব্য। তা-না হলে নারীর অবমাননার ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলবে।
পরিশেষে বলতে হয়, বাংলাদেশের পুরুষ সমাজ মায়ের জন্য জীবন দিতে মুখিয়ে থাকে অথচ নারীকে ‘মেয়ে মানুষ’ বলতে কুণ্ঠিত হয় না। এ জন্যই সম্ভবত উন্নত বিশ্বের মানুষ যেখানে মঙ্গল গ্রহে ঘর বাঁধার কাজে লিপ্ত, সেখানে বাংলাদেশে মানুষ এখনো ‘ধর্ষণ’ শব্দটির সমার্থক হিসেবে ‘নারী নির্যাতন’ ব্যবহারের জন্য অবলীলায় আহ্বান জানাচ্ছে। এমন অবক্ষয়ক্লিষ্ট মনের দারিদ্র্য দূর করে এবং শ্রেণি-ভাষা-ধর্ম-রাজনৈতিক আদর্শ নির্বিশেষে পুরুষদের নারী চিন্তা-প্রগতি-দর্শনে কেবলই ‘আমি পুরুষ’ মনোভাব পরিত্যাগ করা জরুরি। কেননা, দিনশেষে এটি তো ধ্রুবসত্য যে, প্রকৃতি ও মানবজীবনের জন্ম-মৃত্যুর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কন্যা-জায়া-জননীর সব ধরনের মর্যাদা নিশ্চিত না হলে সমৃদ্ধ সমাজ-রাষ্ট্র-পরিবার চিরকাল অধরাই থেকে যাবে। মানবজন্মের সৌন্দর্য ও সার্থকতাটাও বৃথা যাবে শেষ পর্যন্ত।
 
লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

×