ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ২০ মার্চ ২০২৫

ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন

ফিলিস্তিনের গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের (১৯ জানুয়ারি-২০২৪) মাত্র দুমাসের মাথায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরাইল সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ৪২৩ জন নিরীহ নারি-পুরুষ ও শিশু হত্যা করেছে। আহত কয়েক হাজার মানুষ, জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অস্থায়ী হাসপাতাল, আবাসিক ভবনÑ সর্বত্র বিমান থেকে বোমা হামলা করে ইসরাইল। হামলায় হামাসের কিছু শীর্ষ নেতাও নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিমান ও ড্রোন থেকে চালানো হামলায় নবজাতক, শিশু, নারী ও প্রবীণ মানুষের অসাড় দেহ যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। ২০২৩ এর অক্টোবর থেকে টানা ১৫ মাস ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি গাজাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনেছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন তারা। কিন্তু যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে নতুন করে গাজায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে নেতানিয়াহুর সরকার। গত মঙ্গলবার গাজার বেইত লাহিয়া, রাফা, নুসেইরাত ও আল-মাওয়াসি এলাকায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালানো হয়। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা হারানো স্বজনদের বিয়োগান্তক ঘটনার পর মাত্র ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু বিধিবাম! অমানবিক হামলায় হাসপাতালগুলো আবারও হতাহতে ভরে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে গত জানুয়ারি থেকে নাগরিকদের মানসপটে যে স্বস্তির বাতাবরণ উঁকি দিচ্ছিল, তা নিমেষেই উবে গেল হায়েনা বেনিয়ামিন নেতানিাহুর হিংস্র থাবায়।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তিতে যুদ্ধ আবার শুরু করেছে তার দেশ। নতুন করে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা কেবল শুরু।’ যদিও ইসরাইল দাবি করছে, তারা শুধু হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী ইহুদিদের জন্য নতুন কিছু নয়। ইতিহাস অধ্যয়নেও জানা যায়, ইহুদি জাতির প্রতারণার ইতিহাস। নেতানিয়াহু গাজায় আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা প্রসঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ এনেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিগত সময়ে যতজন ইহুদি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিয়েছে, তাদের সকলকেই দেখা গেছে হাস্যোজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যবান। বিশ্ববাসী ইসরাইলি প্রতারণা এখন আর বিশ্বাস করে না।
বিশ্বের মোড়ল ও গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেত ছাড়া ইসরাইল কখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করতে পারে না, এমনটিই বিশ্বাস করে দুনিয়াবাসী। অন্যদিকে হোয়াইট হাউস স্বীকার করেছে, গাজায় এ হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছে নেতানিয়াহু সরকার। যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। জাতিসংঘ বলেছে, প্রথমত, যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। দ্বিতীয়ত, গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া যাবে না। তৃতীয়ত, নিঃশর্তে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! বিশ্ব নেতাদের শুধু বিবৃতিই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে বড় হাতিয়ার হতে পারে, ইসরাইলের হিংস্রতার সমর্থক, পরাশক্তিধর দেশগুলোর পণ্য বয়কট করা। এটি হতে পারে প্রতিবাদের অপ্রতিরোধ্য ভাষা।

×