ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

জমজমাট ঈদের বাজার

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ২০ মার্চ ২০২৫

জমজমাট ঈদের বাজার

পবিত্র রমজানের মাঝামাঝি যখন অতিক্রান্ত তখন প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীসহ সারাদেশে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ও কেনাকাটা। ঈদ মানেই একরাশ খুশি, রাশি রাশি আনন্দÑ তা সে ধনী থেকে গরিব প্রায় সর্বত্রই সম্প্রসারিত। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং বর্ণিল করে তোলে রকমারি ডিজাইন, বাহারি রঙের কাপড় ও নক্সায় বানানো পোশাক, তা শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ যে বয়সেরই হোক না কেন। রমজানের ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হলো বিভিন্ন রকমের আকর্ষণীয় নামের পোশাক-পরিচ্ছদ, জুতার বাহার, নিজেকে ও প্রিয়জনকে সাজানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসাধন সামগ্রী, গহনা ও চুড়ি। ধনীদের জন্য স্বর্ণালঙ্কার পছন্দনীয় হলেও অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্রদের জন্য ফুটপাতের গহনা ও কাঁচের চুড়ি পছন্দনীয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামবাংলা পর্যন্ত যে যার সাধ্যমতো মেতে উঠেছে কেনাকাটায়। সুপারশপ, সুপারমল থেকে শুরু করে ঢাকার ফুটপাত এবং গ্রামগঞ্জের হাটবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের আকর্ষণীয় পণ্য কেনাকাটায় জমজমাট ঈদের বাজার।
চোখ-ধাঁধানো আলোকোজ্জ্বল শপিংমল, মার্কেট ও ফুটপাতে শোভা পাচ্ছে নান্দনিক ডিজাইনের সব পোশাক। ঈদ উৎসব তিন-চার দিনের হলেও এর আমেজ শুরু হয় রোজার প্রায় প্রারম্ভেই। ঈদ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে বিপুল পরিমাণ বাড়তি টাকার লেনদেন হয় পোশাক খাতে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এ সময়ে সারাবছরের গ্লানি মুছে দিয়ে কোলাকুলি ও আনন্দ বিনিময়ের মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করে থাকে। প্রত্যেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদ কেন্দ্রিক একটা বাজেট তৈরি করেন। এবারের ঈদে অন্তত দুই লাখ কোটি টাকা বা ততোধিক ব্যবসা-বাণিজ্য হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের পর্যটন শিল্পও এ সময়ে যথেষ্ট লাভবান হয়ে থাকে। ঈদের ছুটি কাটাতে কেউ যায় দেশের বাড়িতে, কেউ পাড়ি জমায় বিদেশে। উচ্চবিত্তরা দেশের বাইরে গেলেও মধ্যবিত্তরা ছুটে যান দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস। শহরটি ঈদের সময়ে প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে, পরিবহন খাতও হয় সমৃদ্ধ। ঈদের অর্থনীতিতে যোগ হয় কোটি কোটি টাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের জন্য ঈদ উদ্যাপনে বাড়তি টাকা পাঠান তারা। রমজানের প্রথম ১৫ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১৬৬ কোটি ডলারের বেশি, যা দেশীয় মুদ্রায় ২০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।
মানুষের কর্মব্যস্ততা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তাই অনেকেরই সময় হয় না মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করার। আবার অনেকে ভিড় ঠেলে শপিং করা পছন্দও করেন না। তারা প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে ফেলছেন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে। এজন্য দিন দিন বড় হচ্ছে ই-কমার্সের বাজারও। দেশে বর্তমানে ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স বা এফ-কমার্স আছে ১০ হাজারের বেশি। সরকারি হিসেবে দেশের ই-কমার্স বাজারের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। দেশের ই-কমার্স খাত ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর পৌঁছাবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদের সময়ে অর্থনীতিতে যোগ হয় সরকারি সাড়ে ১২ লাখ এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-বোনাস। অর্থনৈতিক লেনদেন বাড়াতে এই টাকা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে ঈদ উৎসবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় জাকাত ও ফিতরার ভূমিকা অপরিসীম। এর মাধ্যমে বিত্তবানদের সম্পদের লাগামহীন সঞ্চয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সব মিলিয়ে এবার অর্থনীতি আবার তার আগের রূপে ফিরে আসবে বলেই প্রত্যাশা।

×