ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

পোশাক নয়, ধর্ষণে দায়ী অসুস্থ মস্তিষ্ক

মো. আবুজর গিফারী

প্রকাশিত: ২০:০২, ১৯ মার্চ ২০২৫

পোশাক নয়, ধর্ষণে দায়ী অসুস্থ মস্তিষ্ক

ধর্ষণ একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যা শুধু নারীর নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য নিকৃষ্টতম লজ্জার বিষয়। নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্ষণ শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয় পুরো সমাজের জন্য এক অমানবিক অভিশাপ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই অপরাধের জন্য অনেক সময় নারীর পোশাককে দায়ী করা হয়। বলা হয়ে থাকে, নারীদের উসকানিমূলক পোশাক পরিধান করার কারণেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায়, যদি পোশাকই ধর্ষণের কারণ হতো তাহলে ৩ বছর, ৫ বছর, ৮ বছরের শিশুরা কেন ধর্ষণের শিকার হয়? কেন ধার্মিক, বোরকা, হিজাব কিংবা সাধারণ শালীন পোশাক পরিহিত নারীরাও আজ বা অতীত থেকেই ধর্ষণের শিকার? এর উত্তর একটাই ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক নয়, বরং অসুস্থ মস্তিষ্ক চরমভাবে দায়ী। সমাজে এখনো এমনটা প্রচলিত যে একজন নারী কেবলমাত্র পোশাকের মাধ্যমে নিজেকে শকুনদের কাছ থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। অথচ ধর্ষণের জন্য একটা অসুস্থ মস্তিষ্কের পিশাচের কাছে পোশাক মুখ্য বিষয় নয়। বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান বলছে, ধর্ষণের শিকার নারীদের একটি বিশাল অংশই শালীন পোশাক পরিহিত ছিলেন। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণ হলো ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের একটি অস্ত্র। এটি কখনোই কামনা বা আকর্ষণের কারণে ঘটে না, বরং ধর্ষকের ভেতরের সহিংস প্রবৃত্তির বহির্প্রকাশ। তাই একজন নারী কী পরিধান করল, তা কখনোই ধর্ষণের কারণ হতে পারে না। আইনের দুর্বলতা ও বিচারহীনতা ধর্ষণের একটি বড় কারণ। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পান না, বরং তাদেরই সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। ফলে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের শাস্তি কঠোর করা হলেও, অপরাধীরা নানা ফাঁকফোকরের কারণে পার পেয়ে যায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্ষণের মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, অপরাধীর রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক ট্যাবু। এসব কারণেও ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পান না। ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর পোশাক বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা না করে অপরাধীকে মুখ্য করে তুলতে হবে। ধর্ষণের জন্য কাপড় নয়, অসুস্থ মস্তিষ্ক দায়ী। এটি শুধু একটি বাক্য নয়, বরং সমাজের জন্য চরম বাস্তবতা। নারীর পোশাক নয়, বরং অপরাধীর মানসিকতা বদলানো জরুরি। তাই সময় এসেছে নারীর পোশাক নিয়ে অযথা বিতর্ক বন্ধ করে আসল সমস্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। আমাদের সকলের দায়িত্ব, ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা।
ঢাকা কলেজ থেকে

×