ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

হতে হবে সচেতন

মালিহা মেহনাজ

প্রকাশিত: ২০:০০, ১৯ মার্চ ২০২৫

হতে হবে সচেতন

বর্তামানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারীরা নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, গার্হস্থ্য সহিংসতা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য এখন প্রতিদিনের খবরের শিরোনাম। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার কারণ কি শুধুই আইন প্রয়োগের ঘাটতি নাকি সামাজিক সচেতনতার অভাবও সমানভাবে দায়ী। বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন থাকা সত্ত্বেও নারী নির্যাতনের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হন যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা সঠিক বিচার পান না। এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় সঠিক আইন প্রয়োগের অভাব। অপরাধের পর অপরাধীরা গ্রেপ্তার হলেও সঠিক তদন্তের অভাব, সাক্ষীর নিরাপত্তা না থাকা এবং দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার কারণে বেশিরভাগ অপরাধী শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়। এছাড়া, প্রভাবশালী অপরাধীদের রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাবের কারণে অনেক মামলার সুষ্ঠু বিচার বাধাগ্রস্ত হয়। তবে শুধু আইন প্রয়োগের ঘাটতি নয়, সামাজিক সচেতনতার অভাবকেও নারী নির্যাতনের একটি বড় কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এখনো সমাজের এক শ্রেণির মানুষ নারীদের অবমাননাকর দৃষ্টিতে দেখে। তাদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখে এবং তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ফলে নারী নির্যাতনকে অনেক সময় সামাজিকভাবে ন্যায্যতা প্রদান করা হয়। এছাড়া, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ভয় ও লজ্জার কারণে অনেকেই আইনের আশ্রয় নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়তে থাকে। নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবার থেকেই ছেলে ও মেয়ের মধ্যে সমঅধিকারের শিক্ষা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ সমতা, নারীর অধিকার ও নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তবে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, শুধু আইন প্রণয়ন করলে হবে না, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করাও জরুরি। প্রসাশনের যথাযথ ভূমিকা, দ্রুত তদন্ত, সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিত এবং বিচার প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানোর মাধ্যমে আইনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। অপরাধীদের রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাব যাতে বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন ও সামাজিক সচেতনতা উভয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। শুধু আইন কঠোর করলেই নারী নির্যাতন রোধ করা সম্ভব নয়; যদি সেটা সমাজের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে না পারে। আবার সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ না করে শুধু সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করলে অপরাধীরা শাস্তি পাওয়া থেকে এড়িয়ে যাবে। তাই নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ‘আইন ও সামাজিক সচেতনতা’ উভয় ক্ষেত্রেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, আইন প্রণেতা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সমানাধিকার ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে

×