
ধর্ষণ একটা ঘৃণ্য অপরাধ। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা বা টেলিভিশনের পর্দায় ধর্ষণের খবর পাই আমরা গড়ে ১২টা বা তারও বেশি। দেশের এই দুর্বল সময়ে ধর্ষণ মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। চলন্ত বাসে, পথে-ঘাটে, বাড়িতে আজ কোথাও যেন নারীর নিরাপত্তা নেই। শিশু থেকে যে কোনো বয়সের নারী প্রতি পদে হয় হেনস্তার শিকার। বাবা, ভাই বা যে কোনো আত্মীয় হোক বা শিক্ষক কারও কাছেই নিরাপদ নয় আজ নারীরা। ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার কারণ ধর্ষক বা অপরাধীর কোনো শাস্তি হয় না। গত কয়েকদিন আগে মাগুরার সাত বছরের ছোট শিশু তিন জান দ্বারা ধর্ষিত হয় কিন্তু বিচার না পেয়েই পরপারে পাড়ি জমায় ছোট্ট আছিয়া। আছিয়ার মতো আর অনেকেই আছে যারা বিচার পায় না কিন্তু সমাজে হেনস্তার শিকার হয়। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমরা লক্ষ্য করি যে অপরাধীর ছবি না ছেড়ে, যে ভিকটিম হয় তার ছবি বেশি বেশি করে ছাড়া হয়। অথচ বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১৪ (১) নং ধারায় সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর ছবি প্রকাশের ব্যাপারে বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবু এসব নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থাও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না ধর্ষণের ব্যাপারে। সরকারেরও তেমন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বিচারের ব্যাপারে। অনেকে বিচার না পেয়ে উল্টো সমাজের কাছে লাঞ্ছিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এজন্য দায়ী দেশের আইন, সমাজ ও বিচার ব্যবস্থা। কেউবা আবার নারীর পোশাকের দোষ দিয়ে দায় এড়াতে চায় কিন্তু ছোট্ট নাবালিকা অবুঝ শিশু বা পর্দানসিন কেউ ধর্ষিত কেন হয় সেই প্রশ্নে সমাজ বাকরুদ্ধ। গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু ধর্ষণের তথ্যও ভিকটিমরা প্রকাশ করে না কারণ তারা জানে এ দেশে ধর্ষকের শাস্তি হয় না বরং প্রতিবাদ করলে বা প্রকাশ করলে তাকেই হেনস্তার শিকার হতে হয় সমাজে। বাংলাদেশের ধর্ষণের পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে জাহেলিয়াতের যুগে বসবাস করছি আমরা। প্রতিটি কন্যা সন্তানের পরিবার তীব্র শঙ্কায় দিনাতিপাত করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ প্রমাণ পেয়েও বিচার সম্পন্ন করে না তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি এবং আইনের ফাঁক-ফোকর বন্ধ করা উচিত। আদালত থেকে ধর্ষকের ফাঁসি মঞ্জুর করা হোক নয়তো ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। অপরাধী কোনোভাবেই যেন আর ছাড়া না পায় সেই ব্যবস্থা করা উচিত তাহলে সমাজে ধর্ষণের পরিমাণ কমবে বা অপরাধীরা অপরাধ করা থেকে বিরত থাকবে। ছোট কন্যা শিশুদের সবার কাছে যেতে দেওয়া যাবে না। এছাড়া যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের ছবি প্রকাশ করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। সর্বোপরি সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা কাম্য। যেন এই দেশে আর একটাও ধর্ষণের ঘটনা আমাদের দেখতে না হয়। আমরা একটা সুস্থ সুন্দর সমাজ চাই যেখানে সবাই স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে।
সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা থেকে