
নারী সমাজের অগ্রগতি ও স্বাধীনতা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নয়, বরং গোটা সমাজের উন্নতির জন্যই অপরিহার্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমাজের রূঢ় বাস্তবতা হলো নারীরা এখনো বৈষম্য, নির্যাতন ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির শিকার। এই অবস্থার পরিবর্তনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে তরুণ সমাজ। কেননা, তরুণরাই নতুন চিন্তাধারা গ্রহণ করতে দ্রুত সক্ষম এবং তারা সমাজ পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি।
১. কুসংস্কার ও গোঁড়ামি দূরীকরণ :
নারীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কুসংস্কার ও গোঁড়ামি। ‘নারী দুর্বল’, ‘নারীর স্থান ঘরে’, ‘নারীকে স্বাধীনতা দিলে সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে’ এমন সব ভুল ধারণা এখনো সমাজে প্রচলিত। তরুণ সমাজ যদি শিক্ষার আলোকে এ ধরনের কুসংস্কার দূর করতে সচেষ্ট হয়, তবে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সহজ হবে।
২. শিক্ষা ও সচেতনতার প্রসার :
শিক্ষাই সমাজ পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার। তরুণরা যদি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করে এবং নারী-পুরুষের সমতার কথা প্রচার করে, তবে এটি সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা নয়, বাস্তব জীবনে নারীদের সমান অধিকারের গুরুত্ব তরুণদের বোঝা উচিত এবং সেটি অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।
৩. নারীদের ক্ষমতায়ন ও সহযোগিতা :
নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা যে কোনো সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তরুণরা ভূমিকা রাখতে পারে। নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা, কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা এবং নারীদের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করাÑ এসবের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রচার:
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। তরুণরা এ মাধ্যমকে ব্যবহার করে নারীদের প্রতি ইতিবাচক ধারণা প্রচার করতে পারে। নারী নির্যাতন, বৈষম্য, অসম আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং নারীর অর্জনগুলো তুলে ধরা তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হতে পারে।
৫. পরিবার ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা:
পরিবার থেকেই নারীদের প্রতি সম্মান ও সমতার শিক্ষা শুরু হয়। তরুণরা যদি তাদের পরিবারে নারীদের সম্মান দেয়, সমান সুযোগ নিশ্চিত করে এবং বাবা-মা ও আত্মীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা করে, তবে সমাজেও এর প্রভাব পড়বে।
পরিশেষে বলতে চাই, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কোনো একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভব নয়; এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে তরুণ সমাজ যদি সচেতনভাবে এগিয়ে আসে, নারীদের সমান অধিকারের বিষয়টি প্রচার করে এবং নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে তা বাস্তবায়ন করে, তবে ভবিষ্যৎ সমাজ হবে আরও উন্নত, সাম্যের এবং মানবিকতাপূর্ণ। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর পথ তৈরি করা শুধু নারীদের নয়, গোটা সমাজের উন্নতির জন্যই অপরিহার্য।
চট্টগ্রাম থেকে