
বড় বড় শিল্পকারখানাসহ পোশাক কারখানাগুলো যখন রানিং ক্যাপিটেল, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট এবং যথাসময়ে বেতন-ভাতা দিতে না পারায় শ্রমিক অসন্তোষের মুখোমুখি, তখন দেশের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া আরও সহজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলোর মধ্যে অন্যতম করদাতা শনাক্ত নম্বর বা টিআইএন না থাকলেও ছোট উদ্যোক্তাদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর জন্য কোনো জামানত লাগবে না। এর পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারা যাতে আরও বেশি ঋণ পেতে পারেন, সেজন্য নেওয়া হয়েছে নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ। ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কে বা কারা নারী উদ্যোক্তার আওতায় পড়বেন, তাও পরিষ্কার করা হয়েছে। সর্বোপরি যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে শাখা নেই, সেগুলোও অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।
নতুন এসব বিধান যুক্ত করে কুটির শিল্প, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএসই) অর্থায়নের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ক্ষুদ্র অর্থায়নের ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে এই নীতিমালা, যা কার্যকর থাকবে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রদত্ত ঋণের ২৫ শতাংশ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বাড়াতে হবে। ২০২৯ সালের মধ্যে ঋণের ২৭ শতাংশ সিএমএসএসই খাতে ঋণ দিতে হবে। উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ক্ষুদ্র ঋণ খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের বিতরিত ঋণের মাত্র ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। এসএমই খাতে প্রদত্ত ঋণের সুদহারও বেশিÑ ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এই উচ্চ সুদহার কমানো বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
সম্প্রতি দেশে পরিবর্তন করা হয়েছে ক্ষুদ্রঋণ সংক্রান্ত আইন। আইনে ‘ক্ষুদ্রঋণ’ শব্দটি আর থাকছে না। বদলে হচ্ছে ‘ক্ষুদ্র অর্থায়ন’। বিদ্যমান ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ) রয়েছে, সেই নামেরও পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হয়েছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে সংক্ষিপ্ত নাম আগেরটাই থাকছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ক্ষুদ্রঋণ আর আগের জায়গায় নেই, অনেক বড় হয়েছে। ধারণাটি এখন ক্ষুদ্র অর্থায়নের। এ কারণেই প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে আইন সংশোধনের। অনেক গ্রাহক ঋণের জন্য ব্যাংকে যেতে পারেন না। তাই ক্ষুদ্রঋণের বদলে ক্ষুদ্র অর্থায়ন এখন বাস্তবতা। আবার সঞ্চয়কারীদের অর্থ বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে ব্যাংক খাত এখন ভুগছে। সময় এসেছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন খাতটিকে ঢেলে সাজানোর। সেই সঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাতটিকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা। আইন ও বিধিমালা পরিবর্তনের এ উদ্যোগ হচ্ছে ক্ষুদ্র অর্থায়নের চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন। এই উদ্যোগ অবহেলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন এবং দেশের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের সুযোগ করে দেবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা। সর্বোপরি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে আরও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়।