ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

যমুনায় দীর্ঘতম রেল সেতু

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ১৯ মার্চ ২০২৫

যমুনায় দীর্ঘতম রেল সেতু

দেশের অন্যতম শস্যভাণ্ডার উত্তরের দুয়ার খুলেছে। উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রেল সেতু যমুনা নদীর ওপর। দেশের কৃষি অর্থনীতির অন্যতম জোগানদাতা উত্তরের জেলাগুলো। যমুনায় রেল সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক গতি আসবে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যানের ওপর নির্মিত হয়েছে নতুন সেতুটি। ১৯৯৮ সালে ২৩ জুন, যমুনা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ধীরগতিতে চলে আসছে। কিন্তু দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত এই সেতু দিয়ে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে প্রতিদিন।
১২ ফেব্রুয়ারি, পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী থেকে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে যমুনা রেল সেতু হয়ে পৌঁছায় ঢাকায়। সেতু পাড়ি দিতে সময় লেগেছিল মাত্র সাড়ে ৩ মিনিট। সেতুর দুই পাড়ের স্টেশন ইব্রাহিমাবাদ ও সয়দাবাদের মধ্যে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এই অংশ পার হতে ৭ মিনিটের বেশি লাগে না। যেখানে যমুনা সড়ক সেতু পার হতে ট্রেনের সময় লাগত ২০-২৫ মিনিট। নিঃসন্দেহে এ এক প্রভূত উন্নয়ন। নতুন রেল সেতুতে আসা-যাওয়ার দুটি লাইন (ডুয়াল গেজ ডাবল ট্র্যাক) রয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর দুটি লাইনেই ট্রেন চলাচল করছে। যাতায়াতের সময়ও কমেছে। নতুন সেতু চালু হওয়ায় এখন আর সড়ক সেতুতে ট্রেন চলাচল করবে না। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। কিন্তু ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে সেতুর টেকসই নিরাপত্তার জন্য এর চেয়ে কম গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
সেতুর পূর্বপ্রান্ত ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি ও জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে। এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে উত্তরের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। অনুসন্ধানে জানা যায়, নব্বই দশকে যমুনা সড়ক সেতুতে শেষ মুহূর্তে রেল ট্র্যাক যুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৬ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায়, সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেল কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করত। এ সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২৩ সালে, কিন্তু হয়নি। সময়ের সঙ্গে প্রকল্প ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। অবশেষে ২০২৫ সালে যমুনা রেল সেতু জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হলো, যা অবহেলিত উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

×