
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ আজকের তরুণদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণার সুযোগ, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা অনেক শিক্ষার্থীকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। তবে এই পথ সহজ নয়।পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছাড়া এটি সফল করা কঠিন। বিদেশে পড়তে চাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করতে হয়, যা সঠিকভাবে জানা থাকলে স্বপ্ন পূরণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
প্রথমেই ঠিক করতে হবে কোন দেশ এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাও। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, টিউশন ফি, বৃত্তির সুযোগ, বসবাসের ব্যয় এবং আবহাওয়াÑ এসব বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো শিক্ষার মান এবং গবেষণার সুযোগের কারণে জনপ্রিয়। তবে এসব দেশের পাশাপাশি চীন, জাপান, তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেও ভালো শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের পর গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভর্তি প্রক্রিয়া বোঝা। বেশিরভাগ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হলে একাডেমিক রেজাল্ট, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এবং অন্যান্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য ওঊখঞঝ, ঞঙঊঋখ, চঞঊ ইত্যাদি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, যা নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের ওপর। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে চাইলে ঝঅঞ, এজঊ, এগঅঞ এর মতো স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।
অর্থনৈতিক দিকটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন বিদেশে পড়তে গেলে প্রচুর টাকা লাগে। তবে বৃত্তি বা স্কলারশিপের সুযোগ থাকলে এই ব্যয় অনেকটাই কমে আসে। প্রায় সব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ই মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রদান করে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রামও রয়েছে, যেমনÑ ঋঁষনৎরমযঃ, ঈযবাবহরহম, ঊৎধংসঁং গঁহফঁং, উঅঅউ, গঊঢঞ ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকারও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি দিয়ে থাকে, যা একবারে সম্পূর্ণ টিউশন ফ্রি বা আংশিক ফান্ডিং হতে পারে।
ভর্তি ও স্কলারশিপের জন্য প্রয়োজন হয় একটি শক্তিশালী আবেদনপত্র। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঝঃধঃবসবহঃ ড়ভ চঁৎঢ়ড়ংব (ঝঙচ), জবপড়সসবহফধঃরড়হ খবঃঃবৎ (খঙজ) এবং জবংঁসব (ঈঠ)। ঝঙচ এমন একটি লেখনী যেখানে নিজের শিক্ষা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন বেছে নিয়েছো তা তুলে ধরতে হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তোমার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দেয়। খঙজ সাধারণত শিক্ষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়, যা তোমার একাডেমিক যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি দেয়। এছাড়া ঈঠ-তে তোমার একাডেমিক রেজাল্ট, অতিরিক্ত কাজের অভিজ্ঞতা এবং স্কিল তুলে ধরতে হয়।
ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভিসা আবেদন। ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নিতে হয়। বেশিরভাগ দেশেই স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ফান্ডিং প্রমাণ করতে হয়। অর্থাৎ দেখাতে হয় যে তোমার পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। স্কলারশিপ থাকলে বিষয়টি সহজ হয়ে যায়।
বিদেশে পড়তে গেলে মানসিক প্রস্তুতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন পরিবেশ, সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সহজ নয়। তবে আত্মবিশ্বাসী হলে এবং পরিকল্পিতভাবে এগোলে বিদেশের পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতা জীবন বদলে দিতে পারে। নতুন ভাষা শেখা, নতুন মানুষের সঙ্গে মিশে অভিজ্ঞতা অর্জন করা এবং গবেষণার সুযোগ নেওয়াÑ এসবই একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও পেশাগত দক্ষতা বাড়িয়ে তোলে।
সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। এজন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। কারণ প্রতিযোগিতা অনেক বেশি এবং প্রতিটি ধাপে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। উচ্চশিক্ষার এই পথচলায় যারা এগিয়ে যেতে চায়, তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মবিশ্বাস এবং লেগে থাকার মানসিকতা। যদি তুমি লক্ষ্য স্থির রাখো এবং ধাপে ধাপে এগিয়ে যাও, তবে বিদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা কোনো কঠিন কাজ নয়।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ