
সব রকম মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স সত্ত্বেও নতুন নতুন মাদক ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এবারে জানা গেছে নতুন মাদকের নাম ও অনুপ্রবেশের খবর। নতুন মাদকটির নামটিও ভয়ংকরÑ ডেভিলস ব্রেথ বা শয়তানের নিশ্বাস। আরও যা বিস্ময়ের তা হলো নতুন এ সর্বনাশা মাদক বাংলাদেশে ঢুকেছে বিদেশী নাগরিকের মাধ্যমে। ডেভিলস ব্রেথের আসল নাম স্কাপোলামিন, যা প্রধানত উৎপন্ন হয় বিশ্বে মাদক তৈরি ও পাচারের জন্য কুখ্যাত কলম্বিয়ায়। দেশী ও আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধী চক্র মাদকটি বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমেও ব্যবহার করে থাকে। ডেভিলস ব্রেথে টার্গেট করা ব্যক্তিকে প্রধানত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পানি পান করানোর মধ্য দিয়েও কৌশলে কাজটি সম্পন্ন করা যায়। ফলে, উক্ত ব্যক্তি খুব সহজেই মাদক কারবারির হাতের পুতুলে পরিণত হন। এরপর বিভ্রান্ত ও উ™£ান্ত ব্যক্তিকে দিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ যে কোনো মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া খুব সহজ হয়ে যায়। সম্প্রতি যশোরে এক ব্যবসায়ীর দোকানে ঢুকে স্কাপোলামিন ব্যবহারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় কয়েক লাখ টাকা। মাদকের আচ্ছন্ন প্রভাবে উক্ত ব্যক্তি নিজেই প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। পরে সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তিন ইরানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উল্লেখ্য, তিন ইরানি পর্যটন ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এ মাদক প্রয়োগের মাধ্যমে ইতোমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তাদের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়েছে আগেই।
দেশে ইয়াবা, হেরোইন ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইয়াবা নামের ভয়ংকর এক মাদক। এর প্রবেশ ঠেকাতে হবে যে কোনো উপায়ে। দেশে মাদক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও মাদকবিরোধী অভিযানে কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের সাফল্য দৃশ্যমান নয়। মিয়ানমার, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত থেকে দেশে বিভিন্ন রকম মাদক প্রবেশের বিষয়টি বহুল আলোচিত। দেশের দীর্ঘ সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় সহজেই প্রবেশ করছে নানা রকম মাদক।
ইতোমধ্যে দেশে ইয়াবার বিস্তার এবং এর ভয়াবহতার বিষয়টি উঠে এসেছে। ইয়াবা সেবনে মানবদেহে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়, এর সবটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জানা গেছে, এটি সেবন করলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এছাড়া বিষণ্নতা বৃদ্ধির কারণে তৈরি হতে পারে আত্মহত্যার প্রবণতা। আরও জানা গেছে, এলএসডি, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ব্যক্তির কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এর জালে একবার জড়ালে একমাত্র মৃত্যুই হতে পারে মুক্তির উপায়। এসবের বাজারমূল্যও কম নয়। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, বাংলাদেশকে ঘিরে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ইয়াবার কারখানা। মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরাও। এ সুযোগে বিভিন্ন দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের প্রলুব্ধ করতে গ্রহণ করছে নানা ধরনের অপকৌশল। মাদকের বিরুদ্ধে যথাযথ কার্যকর অভিযান না চালালে তরুণ সমাজের যে ক্ষতি হবে, তা কোনোভাবেই পূরণ করা যাবে না। মাদকবিরোধী অভিযানে বাড়াতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহার। ইয়াবা, আইস, এলএসডি, হেরোইন ইত্যাদি মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন প্রতিরোধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে দেশব্যাপী।