ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

দীর্ঘ তাপপ্রবাহের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১৯:০১, ১৭ মার্চ ২০২৫

দীর্ঘ তাপপ্রবাহের আশঙ্কা

দেশের ঋতু পরিক্রমায় বসন্তকাল বিরাজ করলেও চৈত্র শুরু না হতেই অনুভূত হচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এবারে শীতকালে তেমন ঠান্ডা অনুভূত না হওয়ায় গরমের অনুভূতি টের পাওয়া যাচ্ছে আগে থেকেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাষ অনুযায়ী দেশের কিছু অঞ্চলে ইতোমধ্যে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। চলমান তাপমাত্রা অচিরেই বিস্তার লাভ করতে পারে সারাদেশে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে প্রতিবছরই আগের বছরের রেকর্ড ভাঙছে এপ্রিলের তাপমাত্রা। এও বলছেন যে, একটানা দীর্ঘ তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবারে কম থাকলেও তাপমাত্রা বরাবরের মতোই অব্যাহত থাকবে। তবে এবারে কালবৈশাখীসহ বজ্রঝড়ের সংখ্যা বাড়তে পারে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘকালীন তাপপ্রবাহের বছর, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো প্রাক শিল্পস্তরের মতো প্যারিস চুক্তির এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে করেছিল ১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও বাড়তে পারে তাপপ্রবাহ।
আগামী এপ্রিলের ভয়াবহ তাপমাত্রা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আগাম প্রস্তুতি তেমন দৃশ্যমান নয়। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। একই সঙ্গে শিল্পকারখানা ও ইটভাঁটির ধোঁয়া এবং ধূলিকণায় বেড়েছে বায়ুদূষণ। বর্ষা মৌসুমের আগে রাজধানীর খালগুলোর পুনরুদ্ধার কার্যক্রমেও পড়েছে ভাটা। মহানগরীকে বৃক্ষাচ্ছাদিত করা না গেলে তাপপ্রবাহ মোকাবিলা হতে পারে দুঃসাধ্য। এসব ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশন অচিরেই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন বন ও পরিবেশ পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাজধানীতে বৃক্ষাচ্ছাদিত অংশ বাড়ানো, উঁচু ভবন নির্মাণে থাই গ্লাসের ব্যবহার বন্ধ, জলাশয়গুলো অবমুক্ত করে পানি প্রবাহ বাড়ানো, রাস্তাঘাটে পানি ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষের জন্য নিরাপদ পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ, হিটস্ট্রোক এড়াতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সতর্কতা বাড়ানো ইত্যাদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা আদিকাল থেকে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঝড়-ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি-বন্যা, নদীভাঙন, অনাবৃষ্টি-খরা ইত্যাদি মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত। তারা প্রকৃতির সদা পরিবর্তনশীল গতিপ্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে জীবনযাপন অতিবাহিত করে থাকেন। সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বাংলাদেশকে তারা পরিণত করেছেন একটি জলবায়ু অভিযোজন বাসভূমিতে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ ঝুঁকিতে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। দেশে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয় ৭১ লাখ মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে এক কোটি ৩৩ হাজারের বেশি। সে অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

×