
দেশের প্রায় সব কারাগারে কারাবন্দির সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ। সারাদেশে কারাগার রয়েছে ৬৯টি। এগুলোর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৬টি জেলা কারাগার। এসব কারাগারে সব মিলিয়ে বন্দি ধারণ ক্ষমতা মোট ৪২ হাজার ৫৯০ জন। গত ২ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশের এসব কারাগারে বন্দি ছিলেন মোট ৬৯ হাজার। প্রায় প্রতিটি কারাগারে দ্বিগুণ বন্দি অবস্থান করছেন। তদুপরি ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টসহ’ বর্তমানে চলমান যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং নিয়মিত মামলায় মোট ৩০ হাজার ৩৮৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। চলমান এসব অভিযানে কারাবন্দির সংখ্যা বাড়ছে প্রায় প্রতিদিনই। ফলে স্বাভাবিকভাবে মাত্রাতিরিক্ত চাপ বেড়েছে কারাগারগুলোতে। যদিও কিছু আসামি আদালতের জামিন সাপেক্ষে মুক্তি পাচ্ছেন প্রায় প্রতিদিনই, তবু কারা কর্তৃপক্ষ ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কারাবন্দি নিয়ে ব্যবস্থাগত ক্ষেত্রে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
উদাহরণত বলা যায়, বর্তমানে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৪ হাজার। তবে এখানে এখন বন্দির সংখ্যা প্রায় আট হাজার। অন্যদিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের ৪টি কারাগারের প্রায় প্রতিটিতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বন্দি রয়েছেন। সারাদেশের কারাগারগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। এর ফলে প্রধানত যেসব অসুবিধা ও সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হলোÑ বন্দিদের গাদাগাদি করে থাকা-শোয়া-বসা, কারাভ্যন্তরে চলাফেরার স্থানের অপপর্যাপ্ততা, টয়লেট ও গোসলখানা, সর্বোপরি কারারক্ষীর সমস্যা। যেমনÑ প্রতি দশজন কারাবন্দির জন্য একজন কারারক্ষীর দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও বর্তমানে বন্দির সংখ্যা ৫০ হলেও একাই তাকে সব সামলাতে হয়। কেবল খাবারের বিষয়টিতে তেমন একটা সমস্যা হয় না। কেননা, কারাগারের বন্দির সংখ্যানুপাতে বরাদ্দ করা হয় প্রতিদিনের খাবারের বাজেট। তাই বলে বন্দিদের জন্য বরাদ্দ খাবারের মান যে তেমন উন্নত ও পুষ্টিকর এমন বলা যাবে না। অপ্রিয় হলেও বলতে হয় যে, এসবই অমানবিক এবং মানবাধিকারের চেতনার পরিপন্থি।
এর বাইরেও দেশের কারাগারগুলোতে রয়েছে আরও নানা সমস্যা। অতিরিক্ত বন্দির কারণে সংশ্লিষ্টদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, কারাভ্যন্তরে মাদকের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাইরের জগত বিশেষ করে অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ, কারাগার ভেঙে পলায়ন, এমনকি জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়া ইত্যাদি। যে কারণে গত তিন মাসে শুধু কেরানীগঞ্জ কারাগারে ২৭৫টি ঝটিকা তল্লাশি অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মোবাইল ফোন ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। তদুপরি ১৭টি কারাগার পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কারাগারের দেওয়াল ভেঙে বন্দিদের পলায়নের ঘটনাও ঘটছে। আশার কথা এই যে, কারাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটির সম্প্রসারণ ও সংস্কার প্রক্রিয়ার কাজ চলমান। নতুন কারাগার চালুর উদ্যোগও প্রক্রিয়াধীন। তদুপরি কারা ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও ডিজিটাল করাসহ কারাবন্দিদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এসব বাস্তবায়ন হলে কারাবন্দিদের মানবিক মর্যাদা অনেকটাই নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।