ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘ মহাসচিব

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ১৬ মার্চ ২০২৫

রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘ মহাসচিব

কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে শুক্রবার ইফতার করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বিষয়টি মানবতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। পরে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব আশ^াস দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সহায়তা বাড়াতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। স্মরণযোগ্য, মাত্র এক সপ্তাহ আগে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার পরিমাণ অর্ধেক কাটছাঁট করার ঘোষণা দিয়েছিল। খাদ্য সহায়তা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার চিঠি ৫ মার্চ পেয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়। ওই সময়ে আমরা সম্পাদকীয়তে লিখেছিলাম সংবাদটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভয়ানক সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও পাচারের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। এটা পরিষ্কার যে, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার খাবার জোগাতে সামনে আসছে কঠিন সময়। যাহোক, এক সপ্তাহ পরে জাতিসংঘ মহাসচিবের আশ^াসবাণী নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তার বক্তব্য বিশে^র শুভকামী মানুষের জন্যে সান্ত্বনাসূচক ও প্রেরণাদায়ক। তিনি বলেছেন, মানবিক সহায়তা কমানো একটি অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করছে, অন্যদিকে আবার বিশ^জুড়ে মানবিক সহায়তা করছে সংকুচিত।
ক্রমবর্ধমান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনীতি, সামাজিক পরিবেশ, কক্সবাজার অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যদিও রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট, বিশ্ব সম্প্রদায়েরই এর দায়ভার বহন করা ছিল যুক্তিযুক্ত। শুধু খাদ্য কিংবা মানবিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ কিংবা ভার লাঘব সম্ভব হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা, মানবিক সহায়তা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রায় দেড় মিলিয়ন রোহিঙ্গা অভিবাসীর চাপে কক্সবাজারের পরিবেশগত ও সামগ্রিক প্রভাব ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এখনই গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদার করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও কোনো বিকল্প নেই।
এটি বাস্তবতা যে, খাদ্য সহায়তার বাজেট অর্ধেকে নেমে আসা রোহিঙ্গা সংকট ঘনীভূত হওয়ারই ইঙ্গিতবাহী। তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো না গেলে পুরো অঞ্চল ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দেওয়া বিচিত্র নয়। অস্বীকারের উপায় নেই, বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের জন্য হয়ে উঠছে বিরাট বোঝা। কক্সবাজার থেকে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। পরিচয় গোপন করে নিচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট। দিন যত যাচ্ছে, ততই ভারী হচ্ছে রোহিঙ্গা বোঝা। এখন ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ হয়ে উঠছে বাজেট সংকট। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের জোরালো পদক্ষেপ হলো জাতিসংঘ মহাসচিবের সরেজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন। আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আরও কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও নতুন করে বিশ^ নেতাদের সামনে আনা চাই। জাতিসংঘের মহাসচিব যথার্থই বলেছেন, নিরাপদে স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে স্বদেশে ফিরে যাওয়াই রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান।

×