
ছবি: সংগৃহীত
বিচার এবং ন্যায়বিচার এই দুইটি শব্দ প্রায়ই একে অপরের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, তবে এদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এখানে বিচার এবং ন্যায়বিচারের মধ্যে পার্থক্যগুলোর বিশদ আলোচনা করা হলো:
১. বিচার (Justice)
বিচার বলতে সাধারণভাবে আইনের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি বা দলের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা কার্যক্রম পরিচালনার প্রক্রিয়া বোঝায়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সমাজে বিদ্যমান আইন এবং বিধি-বিধান অনুসরণ করে কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতি নির্ধারণ করা হয়। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধী বা নির্দিষ্ট পরিস্থিতির অধীনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এবং এতে শাস্তি প্রদান, বিশেষ কোনো বিষয়ে আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা হয়।
২. ন্যায়বিচার (Fairness/Justice)
ন্যায়বিচার হলো সেই বিচার প্রক্রিয়া, যেখানে শুধু আইনের শাসন নয়, বরং মানবিক, নৈতিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি পক্ষের প্রতি সমান এবং নিরপেক্ষ আচরণ করা হয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শুধু আইনের নিয়ম-কানুন মানা হয় না, বরং মানবিক বিবেচনাও একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ন্যায়বিচারে বিচারকের উদ্দেশ্য হলো সকলের প্রতি সুবিচার করা এবং প্রক্রিয়া যেন অসীম পক্ষের জন্য ন্যায্য হয়, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যাতে কেউ অবিচার বা বৈষম্যের শিকার না হয়। সকল ব্যক্তির প্রতি সমান আচরণ এবং তাদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা। বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয়, যাতে কোনো পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না থাকে। বিচার শুধুমাত্র আইন দিয়ে নয়, বরং মানবিক এবং নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিশ্লেষণ করা হয়।
বিচার এবং ন্যায়বিচারের মধ্যে পার্থক্য:
বিচার সাধারণত আইনের শাসনের আওতায় চলে এবং আইনের অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যেখানে প্রমাণ এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করা হয়। ন্যায়বিচার, অন্যদিকে, শুধু আইন নয়, মানবিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক দৃষ্টিকোণকেও মূল্যায়ন করে। বিচার সাধারণত আইনি এবং প্রক্রিয়াগতভাবে পরিচালিত হয়, কিন্তু ন্যায়বিচার হল মানবিক দৃষ্টিকোণ এবং নৈতিক চিন্তার উপর ভিত্তি করে গঠিত। কখনও কখনও আইনের শাসন অনুযায়ী বিচার সঠিক হতে পারে, তবে তা ন্যায়বিচারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু শাস্তি অত্যন্ত কঠোর বা অপ্রয়োজনীয় হতে পারে, যা ন্যায়বিচার বহির্ভূত। অন্যদিকে, ন্যায়বিচারে আইন কেবলমাত্র এক দিক নয়, সামাজিক, মানবিক দৃষ্টিকোণও দেখা হয়। বিচার আইনি নিয়ম অনুযায়ী কিছু করার জন্য প্রত্যাশিত হতে পারে, তবে ন্যায়বিচারে প্রত্যাশা করা হয় যে, এতে আইনের পাশাপাশি মানুষের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিক মূল্যবোধও পর্যালোচনা করা হবে।
ধরা যাক, একজন ব্যক্তি চুরি করেছে এবং আইন অনুযায়ী তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে—এটি বিচার, কারণ এটি আইনের প্রক্রিয়া অনুসারে হয়েছে। তবে, যদি সেই ব্যক্তি খুব দুঃস্থ ও অসহায় হয় এবং তার পরিবার শত্রুদের দ্বারা বিপন্ন, তাহলে তাকে ১০ বছরের কঠোর শাস্তি দেওয়া ন্যায়বিচার হতে নাও পারে, কারণ তার পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তবে, যদি আদালত তার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং কম শাস্তি দেয় বা তাকে সহানুভূতির সাথে সাহায্য করে, তাহলে সেটি ন্যায়বিচার হবে।
ফারুক