ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

কিডনির রোগ প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ২০:১৭, ১৫ মার্চ ২০২৫

কিডনির রোগ প্রতিরোধ

১৩ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নানা বিষয় সামনে চলে এসেছে। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে সাফল্য এসেছে এক দশক আগেই। এরপর কিডনি চিকিৎসায় বড় ধরনের ভালো খবর নেই। অথচ কিডনি জটিলতায় ভুগছেন কোটি মানুষ। চিন্তার বিষয় হলো, এ রোগের চিকিৎসার জন্য দেশে মাত্র ৪০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মধ্যে আবার ৭০ শতাংশ রাজধানীর বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে প্র্যাকটিস করে থাকেন। রাজধানীতে যে কিডনি হাসপাতাল রয়েছে, তার শয্যাসংখ্যা সীমিত। কিডনি চিকিৎসায় ডায়ালাইসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই সেবা দেশে খুবই সীমিত। কিডনি রোগের চিকিৎসাসেবা বাড়ানো না হলে এটির অন্যতম ঘাতক ব্যাধি হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতি বছর কিডনির নানা রোগে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ মারা যায়।
বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও কিডনির রোগের ধরন বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) ওয়েবসাইটে। আইএইচএমই দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশের রোগ পরিস্থিতির তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। আইএইচএমইর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো কিডনির রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় কিডনিতে পাথরের সমস্যা। কিডনি বিকল হলে তার চিকিৎসা দুই ধরনের। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা এবং কিডনি প্রতিস্থাপন। প্রতিবার ডায়ালাইসিসে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। সপ্তাহে অন্তত দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি এককালীন খরচও অনেক বেশি।
একদিকে চিকিৎসায় সুযোগের অপ্রতুলতা, অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতি। ২০২০ সালে প্রায় ২৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকার ‘১৫টি মেডিক্যাল কলেজ ও ৪৪টি জেলায় ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন’ নামে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল সরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কমিশনের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে জটিলতার কারণে আটকে যায় প্রকল্পটি। এর জন্য দায়ী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী করা সম্ভব হবে না।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে শারীরিক ক্লান্তি, নিয়মিত ওজন কমতে থাকা, হাত-পা বা চোখ ফোলাভাব, প্রস্রাবে পরিবর্তন, অ্যালার্জি বেড়ে যাওয়া ও ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি কারণ অগ্রাহ্য করা যাবে না। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু শুরুর দিকে কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না, অন্তত ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। এরপর রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কিডনির রোগের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম। এজন্য সবার সচেতন ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। চিকিৎসাকে বাণিজ্যমুখী না করে আরও সেবামুখী করার মনোভাব নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে গেলে বাংলাদেশের পক্ষে প্রভূত উন্নতি করা সম্ভব। দেশবাসীরও সেটাই প্রত্যাশা।

×