ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

শ্রমিকদের অসন্তোষ

প্রকাশিত: ২০:১৭, ১৫ মার্চ ২০২৫

শ্রমিকদের অসন্তোষ

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রধান দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার প্রাক্কালে প্রতি বছর বাংলাদেশের কলকারখানা ও গার্মেন্টসের শ্রমজীবী মানুষ বেতন বোনাস ও বকেয়া প্রাপ্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত-সাংঘর্ষের দৃশ্যও দেখা যায় গণমাধ্যমে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসের ঘোষণা এবং পাওনা ছুটির টাকার দাবিতে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন প্রায় প্রতিদিন। একই দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এ ছাড়া শ্রমিক নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতেও আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সরল বাক্যে এটা বলা যায়, গার্মেন্টস খাতের হাত ধরেই প্রধানত ঘুরছে দেশের অর্থনীতির চাকা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শ্রমিকদের বোনাসসহ বকেয়া বেতন এবং যাবতীয় পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)। টিসিসি-এর ৮৫তম সভায় শ্রমিকদের স্বার্থে মোট সাতটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক, মালিক, শ্রম ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা। ত্রিপক্ষীয় এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মালিকপক্ষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কমপক্ষে চলতি মার্চের ১৫ দিনের বেতন দেবেন। শ্রমিক নেতাদের অনড় দাবি, ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের সব পাওনাও অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।  
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, ঈদের আগ মুহূর্তে বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দেওয়ার পরও অনেক কারখানা মালিকই শতভাগ পাওনা পরিশোধ করেন না। ঈদের দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়েও কোনো সমাধান সহজে হয় না। শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় সরকারকে। শ্রমিকদের দাবি, ঈদের আগ মুহূর্তে নয়, অন্তত ১০ দিন আগে বেতন-বোনাসসহ  তাদের সকল পাওনা পরিশোধ করলে কাজের ফাঁকে সুবিধা মতো তারা পরিবারের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারেন। শ্রমজীবী মানুষের এ দাবি যথেষ্ট ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত, আমরা এ দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। ভুলে গেলে চলবে না, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া পবিত্র রমজানের শিক্ষা।

×