
আজকে এ লেখনি লিখতে বসে নিজেকে অথর্ব অযোগ্য ও অপরাধী মনে হচ্ছে। আছিয়া নির্মমভাবে ধর্ষিত হল। আছিয়া মামনি হারিয়ে গেল। আছিয়া নয়, মনে হচ্ছে বাংলাদেশ মরে গেল।একজন পুরুষ হিসেবে আমি লজ্জিত নিন্দিত। এই লেখাটি আছিয়া মামণিকে উৎসর্গ করে এ প্রবন্ধ টি অবতারণা করছি।আছিয়ার ঘটনায় তার নিকট আত্মীয়রা জড়িত থাকার বিষয়টি জানতে পেরে আমি হতবিহ্বল, কোন ভাবেই হিসেব মেলাতে পারছি না। এরকম একটা শিশুর সঙ্গে কি শত্রুতা থাকতে পারে?
ধর্ষণের বিষয়ে যদি একজন আলেমকে প্রশ্ন করি তিনি উত্তর দেন মেয়েরা শালীন পোশাক না পড়ার কারণে ধর্ষিত হয় আবার যদি প্রশ্ন করি সাত বছরের মেয়ে শিশু ধর্ষিত হল কেন? উত্তর দেন বাবা মা সতর্ক থাকলে এমনটি হত না, এবার প্রশ্ন করি বিপরীত লিঙ্গ বাদই দিলাম আপনাদের সমলিঙ্গ মাদ্রাসার ছোট ছোট ছেলে বাচ্চাগুলোকে ওস্তাদদের হাতে বলৎকার হতে হয় কেন? তিনি উত্তর দেন এটা শয়তানের ধোকা নিজেদেরকে জাহির করার জন্য এক শ্রেণীর আলেমওলামা এ বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না যে, আলেমগন দ্বীনি লাইনে ধনী,আর ডাকাত তো ধনীর বাড়িতে ডাকাতি করতে আসে,তাই ইবলিশ শয়তান আলেমদেরকে বেশি ধোঁকা দেয়, এরপর যদি প্রশ্ন করি শয়তানের ধোঁকা হতে পরিত্রান পেতে কোরআন হাদিসে অনেক আমল আছে, এসব আমলে কাজ হচ্ছে না? এবার ওনারা ফতোয়া দিয়ে দেন, এ প্রশ্ন যিনি করছেন, তিনি আলেম ওলামা বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষী,কবে যে কাফের ফতোয়া দিয়ে দেয় আমি চিন্তায় আছি। হয়তো ধর্ষর্নেকারীদেও কে প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দিবে ইবলিশ শয়তান দায়ি। হয়তো ইবলিশ শয়তানকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিবে, এই সব কর্মকাণ্ড করার জন্য সৃষ্টিকর্তা আমাকে ক্ষমতা দিয়েছেন, অর্থাৎ এই সব করানোর লাইসেন্স আমার আছে,কাজেই এইগুলির জন্য আমি দায়ী নই। কবে যে ধর্ষণকারীরা একত্রিত হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন এই বলে যে, ধর্ষণের জন্য ইবলিশ শয়তানকে দায়ি করে নির্দেশনা প্রদান করা হোক এবং ধর্ষণকারীদেরকে বেকসুর খালাস করার নির্দেশনা প্রদান করা হোক।
মব জাস্টিস বা আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া এখানে নিত্য নৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুচ্ছ বিষয়ে জনসাধারণ আক্রমনাত্মক হয়ে উঠছে। কেউ কাউকে যেন একবিন্দু ও ছাড় দিতে রাজি নয়। চার দিক থেকে চুরি ডাকাতি খুন হানাহানি ও রাহাজানির খবর আসছে। মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়ছে। মনে হচ্ছে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অপ্রীতিকর ঘটনা যখন তখন ঘটছে। এ দেশটা যেন গঠন-অঘটন পটিয়সী হয়ে উঠছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও তলানিতে নেমেছে। অদূর ভবিষ্যতে ভালো কিছুর জন্য আশাবাদী ও হওয়া যাচ্ছে না।
ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যে এবং এ উপমহাদেশের একাধিক দেশে ধর্ষণসহ একই ধরনের সমস্যা বিরাজমান। অনেকগুলি কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো, এ উপমহাদেশের মানুষের চিন্তাভাবনা দৃষ্টিভঙ্গি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হলেও ব্রিটিশ আইনে এখনো বিচার হয়। আইন সংস্কার করে সময়োপযোগী করা এখন সময়ের দাবি। আমি মনে করি ধর্ষনের মত বিষয়ে এমনভাবে ট্রাইবুনাল করা দরকার, যাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচারকায্য সম্পন্ন করা হয়। তাহলে কঠোর শাস্তির মাধ্যমে এবং অল্প সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভবপর হতে পারে।
সৃষ্টিকর্তার পরে রাজনীতিবিদগন একটা দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। বিচারক ও বিচারপতিদের ভাগ্য ও তাদের হাতে। আমি মনে করি স্বাধীনতার পর হতে অদ্যাবধি বাংলাদেশে সাইকোপ্যাথ বা মানসিকভাবে অস্থির ধরণের রাজনীতিবিদের সংখ্যাই বেশি রয়েছে। যারা অদ্যাবধি তাদের অহংকারী মনোভাব দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার প্রথম অধিকার। কেবল অধিকার নয় সকলের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার। এরপরই অন্ম বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এসব ক্ষেত্রে রাজাকারের সন্তান এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যে কোন মতাদর্শের লোক, সকল ধর্ম বর্ণ গোত্র, সমতল, পাহাড়ি, আদিবাসী ও উপজাতি সকলে সমান অধিকার ভোগ করবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এর বেত্তয় ঘটছে। গতকালই গণমাধ্যমে দেখলাম এক ভদ্রলোক ভয়ে মাটির নিচে লুকিয়েছে, ওখান থেকে তাকে পাকড়াও করে অমুক দলের লোক বলে গণপিটুনি দিচ্ছে। কোন সভ্য দেশে এমনটি হতে পারে না।
এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য এ সময় বাংলাদেশে শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি বা নিরপেক্ষ অভিভাবকের প্রয়োজন ছিল। অন্যান্য দেশের সিভিল সোসাইটি জাতির ক্লান্তি লগ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে অধিকাংশ সুশীল সমাজ পরিচয় দানকারীরা কোন না কোন দলের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন বা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
আমার এই লেখনিতে সাইকোপ্যাথ টার্মস নিয়ে আসার কারণ হলো, বাল্যকাল হতে অদ্যাবধি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের উপর মহল হতে একেবারে নিম্নপয্যায় পয্যন্ত দেখে আসছি কেউ একটা কথা বলে আসছে, তো এ কথা সঠিক বা বেঠিক হোক, সে এটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। এমনটি ও দেখে আসছি যে কথাটি বা সিদ্ধান্তটি শতভাগ ভূল হলে ও সিদ্ধান্তকারী বলে আসছেন, আমি যেটা একবার মুখ দিয়ে বের করি, ওটা বাস্তবায়ন করেই ছাড়ি। অনেকটা সিনেমার খল চরিত্রের মতই। আর এই অসুস্থ ধ্রুব মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনে কালো ছায়ার আঁধার কাটছেনা। সাইকোপ্যাথি কি? সাইকো হলো একটি উপভাষা যার অর্থ মানসিকভাবে অস্থির বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। সাইকোপ্যাথ হলো মানসিকভাবে অস্থির ব্যক্তি, বিশেষ করে একজন ব্যক্তি যার ব্যক্তিত্ব অহংকারী এবং অসামাজিক। যার মধ্যে নিজের কর্মের জন্য অনুশোচনা, অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অভাব এবং প্রায়শই অপরাধমূলক প্রবণতা রয়েছে। এ শব্দটির মিলিত অর্থ কষ্টগ্রন্থ আত্মা। এমতাবস্থায় আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশ আজ যোগ্য ক্যাপ্টেন বিহীন জাহাজে পরিণত হয়েছে। আজ আমরা অভিভাবকহীন জাতি হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। আরো সময় অতিবাহিত হলে হেনরি কিসিঞ্জারের দেওয়া তলাবিহীন জুরি উপাধী পেতে কতক্ষণ।
ফুয়াদ