
অটিজম কোনো পাপের প্রায়শ্চিত্ত নয়Ñ এটি মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়বিক বিকাশজনিত একটি বিশেষ অবস্থা। বিশ্বে প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে প্রায় একজন অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে (অঝউ) আক্রান্ত হয়। এটি শিশুর আচরণ, যোগাযোগ ও সামাজিক দক্ষতায় বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে।
অটিজম কেন হয়
বর্তমানে এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও গবেষণায় দেখা গেছে, জিনগত কারণ এতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় কিছু ওষুধ সেবন, অপুষ্টি, সংক্রমণ, কিংবা মাদক গ্রহণও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ছেলে শিশুরা মেয়েদের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়।
কখন ও কীভাবে বুঝবেন
অটিজম সাধারণত শিশুর তিন বছর বয়সের মধ্যেই লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। শিশুর বিকাশ পর্যবেক্ষণ করলে ধাপে ধাপে বিভিন্ন লক্ষণ স্পষ্ট হতে পারে।
৩ মাস বয়সে
মা-বাবার মুখ দেখে হাসবে না, চোখে চোখ রাখবে না।
শব্দের উৎসের দিকে তাকাবে না বা প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।
খেলনা বা বস্তু ধরতে চাইবে না, অঙ্গভঙ্গি করবে না।
৭-৮ মাস বয়সে
পরিচিতজনদের দেখে হাসবে না বা খুশি প্রকাশ করবে না।
অন্যদের সঙ্গে খেলতে বা সম্পর্ক গড়তে আগ্রহ দেখাবে না।
নাম ধরে ডাকলে প্রতিক্রিয়া দেবে না।
১ বছর বয়সে
অপরিচিত কাউকে দেখে লজ্জা বা ভয় পাবে না।
“না” বললে বুঝবে না বা প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।
“দাদা,” “মামা” ইত্যাদি পরিচিত শব্দ বলবে না।
২-৩ বছর বয়সে
সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে খেলবে না বা মিশবে না, নিজের নাম, বয়স বলতে পারবে না, চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না, উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে না।
চিকিৎসা
আচরণ নিয়ন্ত্রণে এন্টিসাইকোটিক, ফ্যামিলি থেরাপি, গ্রæপ থেরাপি, মিউজিক থেরাপি, ড্রামা থেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী। কিছু কিছু অটিজম বেবী অত্যন্ত মেধাবী হয়। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের অটিজম উপসর্গ ছিল।
অটিজমের ভুল ধারণা ও বাস্তবতা
অনেকে মনে করেন, এটি কোনো অভিশাপ বা পূর্বজন্মের পাপের শাস্তি। এটি একেবারেই ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার। অটিজম কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়; বরং সঠিক পরিচর্যা ও বিশেষজ্ঞ সহায়তায় অনেক শিশুই স্বাভাবিক জীবনের কাছাকাছি আসতে পারে।
কী করণীয় ?
শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে দ্রæত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অটিজম শিশুদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল হোন এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করুন। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করুনÑ অটিজম কোনো অভিশাপ নয়, এটি বোঝার এবং সহায়তা করার বিষয়। অটিজম শিশুরা সঠিক যতœ ও ভালোবাসা পেলে তারাও আমাদের গর্ব হতে পারে। আসুন, তাদের পাশে দাঁড়াই।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি, সিলেট মেডিক্যাল কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন