
এখন চলছে ঋতুরাজ বসন্ত। এ ঋতুতে প্রতিটি গাছ ও পশু-পাখি প্রকৃতিতে নবরূপে সেজে উঠেছে। গাছে গাছে পুরাতন পাতা ঝরে পড়ে নতুন পাতা আসে। পাখিদের মাঝে ঋতুরাজ বসন্ত রঙিন স্বপ্ন বুনন করে চলে অবিরাম। কোকিল, ময়না, ঘুঘু নিস্তব্ধ দুপুরে ডেকে চলে অনবরত। ঋতুরাজ পাখির কলরবে যেন রূপছন্দ খুঁজে পায় সবাই। এ সময় লাল রঙা ফুলে বন বাদাড় ছেড়ে থাকে। জংলি ফুলে প্রকৃতির বন-বনান্তর স্নিগ্ধ শোভায় পুঞ্জীভূত করে তোলে। কৃষকের ফসলের মাঠ এখন ফুল থেকে ফল বাড়ন্ত হচ্ছে। মাঠে পাকা ফসলের ঝনঝনানিতে কৃষকের মন মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। গ্রামের মেঠো পথগুলোতে কৃষাণীদের ফসল মাড়ানোর দৃশ্যগুলো যেন অভাবিত। ঋতুরাজ বসন্তেই এত শোভা মেলে। পাখিরা বসন্তজুড়েই তপ্ত দুপুরে গ্রামীণ জনপথকে মাতিয়ে রাখে। তাছাড়া প্রকৃতি নানা রঙের বর্ণিল সমাহারে গাছে গাছে শোভাময় দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। শিমুল আর পলাশের লাল রঙে বসন্তের নীরব-নিস্তব্ধ প্রকৃতির অমলিন বদনে দৃপ্ততা ছড়িয়ে দিচ্ছে বনে বনে। বসন্তের শুরুতে শরীর জুড়ানো ঝিরিঝিরি হাওয়ায় গাছের পাতার পতন ঘটিয়ে তাকে কঙ্কালসার করে তোলে। তখন গাছে গাছে পাতার ঝরে পড়ার মর্মর শব্দের করুন সর বেজে চলে চারদিক। তারপর গাছে গাছে সবুজ পাতার নতুন কুঁড়ি এসে পত্র-পল্লবকে সবুজে সবুজে ঢেকে দিয়ে তাকে পরিপূর্ণ করে তোলে। ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতি যেন ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে বন-বাদাড়গুলো। গাছে গাছে কোকিলের মিষ্টি গলার সুরই বলে দেয় এখন বসন্তকাল।
যেদিকে চোখ যায় শিমুল-পলাশে আর মাদার ফুলে লাল রং যেন সবারই দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এ সময় ফোটে অশোক, হিমঝুড়ি, মহুয়া, মাদার, মুচকুন্দ, রুদ্রপলাশ, শাল, স্বর্ণ শিমুল, ক্যামেলিয়া, রক্ত কাঞ্চন, কুরচি, কুসুম, গাব, গামারী, জংলি বাদাম, দেবদারু, নাগেশ্বরসহ আরও অনেক ফুল। ঋতুরাজ বসন্তে মৌমাছিদের যেন ব্যস্ততা বেড়ে যায় মধু আহরণে। তারা এত ফুলের সমাহার দেখে যেন বিমোহিত হয় পড়ে। চারদিকে তখন ফুলের মিষ্টি সৌরভ ছড়িয়ে নানা ফুলেরা তাদের জানান দিয়ে থাকে। বসন্তের প্রকৃতিতে দেব- কাঞ্চন তার ডাল-পালা চারদিকে ছড়িয়ে হালকা গোলাপী ফুলের পসরা সাজায়। আর কনকচাপা কাঁচা সোনা রঙের বাহারি আয়োজন করে প্রকৃতি সাজিয়ে বসে থাকে। রুদ্র পলাশ থোকায় থোকায় ফুলের ডালি নিয়ে বাসন্তী রঙের বর্ণিল রূপের পাঞ্জেরী মেলে প্রকৃতির মধ্যে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। কৃষ্ণচূড়াও এ সময় কম যায় না। বিশাল এলাকায় তার ফুলের ডালা মেলে ধরে শিল্পীর কণ্ঠে বেদনার সুর তুলে দেয়। বসন্তে পলাশ ও শিমুল ফুলকে বলা যায় আগুন ঝড়া। গাঢ় লাল রঙের ফুলে ভরে থাকে গাছটি। লাল ফুলের রঙিন রং ছড়িয়ে তখন মনে হয় যেন বনে বনে আগুন লেগে গেছে। বসন্ত প্রকৃতির মাঝে সুনসান নীরবতা বিরাজ করে থাকে। তার সুশীতল বাতাস দেহমনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। না শীত না গরমÑ এমনই ঋতু প্রকৃতির জন্য বিরল। পৃথিবীতে এমন ঋতু মেলা ভার। তাই তো বসন্তের মিষ্টি সুবাস আমাদের সকলকে সুমোহিত করে তোলে।
অলিউর রহমান ফিরোজ
রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ