ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

অনাবাদি জমি চাষ

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ১৪ মার্চ ২০২৫

অনাবাদি জমি চাষ

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কিন্তু বাড়ছে না ভূমি। এ অবস্থায় বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণালব্ধ অর্জন সত্যিই আশা জাগানিয়া সংবাদ। বাংলাদেশের মোট চাষযোগ্য জমির ৭৮ শতাংশই ধান চাষের আওতায়। দেশের নাগরিকদের খাদ্যনিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে সরকার ধান উৎপাদনের ওপর ব্যাপক জোর দিয়েছে সাম্প্রতিককালে। এ লক্ষ্যে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধানের উৎপাদন বাড়ানো অত্যাবশ্যক। দেশের প্রতিইঞ্চি অনাবাদি জমি কাজে লাগিয়ে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি নীতি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে ঠিক করা হচ্ছে। তৎপরতা শুরু হয়েছে ব্যক্তি মালিকানার বাইরে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পতিত ভূমিতে ফসল ফলানোর। নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। দেশের কৃষি বিভাগ এমন সব জমি চিহ্নিত করেছে, যা কখনো কৃষি কাজে ব্যবহার হয়নি। এসব জমিতে চাষাবাদ করলে কৃষকের জন্য খুলে যাবে নতুন সম্ভাবনা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হতে পারে। বাংলাদেশ ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তিনটি দ্রুততম অর্থনীতির দেশ হবে। বর্তমান খাদ্য চাহিদার নিরিখে কৃষিভূমির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ ও ধান চাষের উপযোগিতা বিবেচনায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে গোটা দেশকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করেছে কৃষি বিভাগ। পরিকল্পিত পন্থায়, অনাবাদি ও পতিত জমিতে চাষ করা গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮.৩ লাখ টন এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১০.৬ লাখ টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন সম্ভব হবে। অনাবাদি, পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, শুধু বসতবাড়িতেই পতিত জমি রয়েছে দুই লাখ হেক্টর, যা মোট অনাবাদি জমির চার ভাগের এক ভাগ। দেশজুড়ে বসতবাড়ির আশপাশ, বিরোধপূর্ণ জমি, প্রাতিষ্ঠানিক জমি, উঁচু ভূমি, পাহাড়ি এলাকা, উপকূলীয় অঞ্চল, হাওড়-বাঁওড়, চরাঞ্চলসহ নিচু ও নিমজ্জিত জমি বছরের পর বছর অনাবাদি থাকছে। কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে তিন থেকে চার ধরনের অনাবাদি জমি রয়েছে। কিছু জমি পতিতই থাকছে, যেগুলো আবাদে আনা যাবে না। অনেক জমি রয়েছে শুধু এক ফসলি হিসেবে। আবার এমন অনাবাদি জমিও রয়েছে, যার মালিক খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বসতবাড়ির পাশেও পড়ে আছে অনেক জমি। কিছু জমি রয়েছে যেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই আবাদযোগ্য করে তোলা সম্ভব।
আবাদযোগ্য অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে কিছু কৌশলী ভূমিকা রাখতে হবে। সব জমিতেই ধান হবে না। কোথাও ধান, কোথাও আম-জাম, লেবু, গম, সবজি হবে। আবার কোথাও ধান চাষ, জলাভূমিতে হবে মৎস্য চাষ। দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিবিজ্ঞানী, কলাকুশলী ও কৃষককূল নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে তারা সাফল্যও পেয়েছেন। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেক মেধাবী ও দায়িত্বশীল।  কিছু দিন পর পর আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই তাদের ফসল উদ্ভাবনের নতুন সংবাদ। তাদের মতে, ধান উৎপাদন বাড়াতে শুধু আবাদযোগ্য অনাবাদি জমিই নয়, এমন জমিও আবাদের আওতায় আনতে হবে, যেগুলো আগে চাষের কথা কেউ চিন্তাও করেনি।

×