ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ১৪ মার্চ ২০২৫

ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক

মানুষরূপী কিছু প্রাণীর মহানিষ্ঠুরতার শিকার ফুলের মতো এক শিশুর তীব্র যন্ত্রণা ভোগের পর মৃত্যুর কাছে পরাজয় অত্যন্ত মর্মান্তিক ও ক্ষোভের। এ ঘটনা সমাজকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা কতটুকু মানুষ হয়েছি, সভ্য হয়েছি, তার মাপকাঠি মাগুরার শিশুটির ওপর বর্বর নির্যাতন। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, দেশবাসীর প্রার্থনাÑ সবটাকে ব্যর্থ করে দিয়ে মাগুরার আট বছরের কন্যাশিশুটি চলে গেল। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় শিশুটির মৃত্যু হয়। জীবন ও জগৎকে দেখার আগেই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটিকে যে অবর্ণনীয় নির্মমতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেটা এককথায় নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র যে চূড়ান্ত রকম ব্যর্থ, তারই রূঢ় প্রতিচ্ছবি।
আজকে দেশজুড়ে অনেক নিন্দা, অনেক প্রতিবাদ। খুব ভালো। কিন্তু শুধু দোষীদের ফাঁসি চাইলেই কি শিশুরা নিরাপদ হবে? কে অপরাধী? শুধু কি তারাই যারা ধর্ষণ করে, নাকি পুরো সমাজ? আমরা সবাই মিলে এমন সমাজ গড়ে তুলেছি, যেখানে আমাদের সম্মিলিত মানসিকতা এমন যে, ঘরের কিংবা বাইরের পুরুষ আমার সন্তানের গায়ে হাত দিলে, সে দোষ আমার সন্তানের। এতে নারী অপবিত্র হয়, বিকৃত পুরুষ নয়। তাই নারীর এ ‘লজ্জা’ লুকিয়ে ফেলাই শ্রেয়। এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে আরও অনেক শিশুর অশ্রু দেখার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
অবাক মানতে হয় এই ভেবে যে, শিশু নিপীড়ন একটুও থামেনি। মাগুরার শিশুটির চলে যেতে না যেতেই আরেক শিশুর ওপর হামলে পড়ে পশুরূপী পুরুষ। জনকণ্ঠ অনলাইনের সংবাদ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৭ বছবয়সী এক শিশুকে ধর্ষচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে শিশুটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার তার ফরেনসিক টেস্ট করানোর কথা রয়েছে।  
বাংলাদেশে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড ও কমিউনিটি পুলিশিং রয়েছে। ২০২০ সালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা বাড়তে থাকায় সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন এনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। কমিউনিটি পুলিশিং চালু করা হয়, যাতে স্থানীয় মানুষ সহজেই অভিযোগ করতে পারে। কঠোর শাস্তির কারণে কিছুটা ভীতি তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাস্তির চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বেশি দরকার। নারীবাদী সংগঠনগুলো বলছে, শুধু কঠোর শাস্তি দিলেই হবে না, বরং পুলিশের প্রশিক্ষণ ও ভুক্তভোগীদের সহায়তা ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে। আমাদের এ বিষয়ে কঠোর আইন ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ধর্ষণের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। পরিবার থেকে স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানÑ সর্বত্র সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
দেশের প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ সমাজ গড়তে হলে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সেইসঙ্গে শহরের পাড়া-মহল্লায়, প্রতিটি গ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোকÑ এটাই দেশবাসীর চাওয়া। তবে শুধু মহানিষ্ঠুর অপরাধীরা সাজা পেলেই মর্মান্তিক শিশু নিপীড়নের প্রতিকার হবে না। এজন্য সমাজের জেগে ওঠা চাই। সমাজের পরিবর্তন প্রয়োজন। পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন হলেই সেটি সম্ভব। সেজন্য বড় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

×