ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সৌদি ভিসা জটিলতা

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৩ মার্চ ২০২৫

সৌদি ভিসা জটিলতা

আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী জনশক্তি রয়েছে সৌদি আরবে। যাদের শ্রম-ঘাম একাকার হয়ে রেমিটেন্সপ্রবাহ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে যুগের পর যুগ। দেশের প্রান্তজনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও টেকসই সমাজ কাঠামো বিনির্মাণে অনিন্দ্য ইমারত তৈরি করছেন প্রবাসীরা। এসব রেমিটেন্সযোদ্ধার ভূমিকা তুলনাহীন। বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশ থেকে ৬২ হাজার ৪৩৬ কর্মী বিদেশে গেছেন, যা জানুয়ারিতে ছিল ৯৭ হাজার ৮৬২ জন। সর্বাধিক জনশক্তি গিয়েছে সৌদি আরবেÑ ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার ২৫৮ এবং জানুয়ারিতে ৭৬ হাজার ৬১৮ জন। সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) জানায়, রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের বাধ্যতামূলক সত্যায়ন প্রক্রিয়া জনশক্তি নিয়োগের গতি কমিয়ে দিয়েছে। এটাই সংখ্যা কমার একটি বড় কারণ।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসন নিশ্চিতকরণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭-এর সংশোধিত বিধি ও এর দফা (১), (২) ও (১৮) অনুযায়ী সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে চাহিদাপত্র যাচাই ও সত্যায়নের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রবাসী শ্রমজীবীদের অবদান অতুলনীয়। বিদেশের মাটিতে তাদের কর্মক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার সময়ের প্রয়োজনে কিছু বিধিবিধান প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকে, যা শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে প্রণীত হয়। যেহেতু জনশক্তি রপ্তানি একটি বড় ও বিস্তৃত খাত এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য, সেহেতু এ খাত নিয়ে যেন কোনো কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র বা ফায়দা লুটতে না পারে, সেদিকে সরকারকে কঠোর নজর দিতে হবে। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এ খাত যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও নজর রাখা আবশ্যক। অতি মুনাফাখোর আদম ব্যবসায়ীদের লোভে যেন নিঃস্ব না হয় আমাদের যুবশক্তি। তবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়নজনিত সমস্যার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলের প্রত্যক্ষ সংযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। কোনো অবস্থাতেই জনশক্তি রপ্তানিতে শ্লথগতি কিংবা থেমে যাওয়া দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কল্যাণকর নয়।
জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের শীর্ষ গন্তব্য সৌদি আরবে যাওয়া জানুয়ারির তুলনায় ৪২ শতাংশের বেশি কমে যাওয়ায় প্রবাসী কর্মসংস্থানে প্রায় ধস নেমেছে। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, একক ভিসাধারীদের জন্য দূতাবাসের বাধ্যতামূলক সত্যায়ন প্রক্রিয়া, যা জানুয়ারির শেষদিক থেকে কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, শ্রমবাজারে অতিরিক্ত সৌদি-নির্ভরতা আগামী দিনে আরও সংকট তৈরি করবে। এখন থেকেই বিকল্প কর্মসংস্থানের খোঁজ করতে হবে অন্যান্য দেশে। যদি মালয়েশিয়া, বাহরাইন, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার পুনরায় চালু করা না যায়, তবে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

×