
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার সময় জনসাধারণের অভ্যন্তরীণ যাত্রা বেড়ে যায়। পরিবারের সবাই একত্রে ঈদ করতে সড়ক, রেল, নৌপথে ছুটে যায় গ্রামের বাড়িতে। যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সড়কপথে যানবাহনের চাপ বাড়ায় ঘটে অনাকাক্সিক্ষত যানজট ও দুর্ঘটনা। রোজার মাস শুরু হলেই রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর প্রধান সড়কে প্রবল যানজট লক্ষ্য করা যায়। তবে ঈদযাত্রায় এবার যাত্রীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে রাজধানীতে প্রবেশের মুখগুলোতে। সারাদেশে ১৫৫টি যানজটের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। ঈদের আগে ও পরে এসব স্থানে মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের তিনদিন আগে ও পরে মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখা এবং ঈদের আগে ৭ দিন ও পরে ৫ দিন সার্বক্ষণিক সিএনজি ও ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে গার্মেন্টসসহ সব শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থাসহ একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়।
ঈদের সময়ে পরিবহন খাতের অসাধু ব্যবসায়ীরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। আবার যাত্রীদের বাড়তি চাপের কারণে দ্রুত গাড়ি চালানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সরকারকে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যেমনÑ বিশেষ ঈদ পরিবহন সিস্টেম চালু, বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগকারী সড়কগুলোতে সিঙ্গেল রুট বা একমুখী সড়ক ব্যবস্থাপনা করা। যাতাযাত ব্যবস্থায় স্বস্তি আনতে সড়ক পরিবহন অধিদপ্তরকে কঠোর নজরদারি করতে হবে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে ব্যবস্থা।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যাত্রীদের এবং চালকদের জন্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেন চালানো এবং আইন অনুযায়ী গাড়ি চালানোর বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। ঈদের সময় ট্রেনেও যাত্রী সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে যাত্রীদের পড়তে হয় অস্বস্তিকর অবস্থায়। এছাড়াও ঈদযাত্রার সময় প্রায়ই ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন বা বিলম্ব হয়, যা যাত্রীদের বিরক্তির কারণ। ঈদের আগে রেল কর্তৃপক্ষের উচিত অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা এবং ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো। ট্রেনের সময়সূচি আগেই জানানো এবং অনিয়মিত বিলম্বের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সিটের সংকট মোকাবেলায় অতিরিক্ত সিটের ব্যবস্থা এবং যাত্রীদের সিট বরাদ্দের সময়ানুক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নদীপথেও ঈদযাত্রার আগে নৌযানগুলোর ফিটনেস যাচাই এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য তা মেরামত করা দরকার। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধে আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়া দরকার।
আশার খবর হলো, এবার ঈদযাত্রায় সড়কে কোনো লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হবে না এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বিআরটি-এর পক্ষ থেকে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা থেকে জানা যায়, দেশের সকল বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং সড়কপথে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়। সড়ক, রেল, নৌপথের পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত ও নিরাপদ করতে হলে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন। সরকার, পরিবহন সংস্থা এবং যাত্রীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের ঈদযাত্রা সবার জন্য নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।