ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

তেল নিয়ে তেলেসমাতি!

শতদল বড়ুয়া

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ১২ মার্চ ২০২৫

তেল নিয়ে তেলেসমাতি!

এবারের রমজান মাসে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সয়াবিন তেল বাজার তথা দোকান থেকে হঠাৎ গায়েব। অধিক মূল্যে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত কয়েক বছর রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধি পেত কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, বেগুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যের। স্থানীয় এক দোকানে গেলাম ইফতারি কিনতে। বিক্রেতা বলতে শুরু করল-মাটন, চিকেন, হালিম, পেঁয়াজু, বেগুনি, ডিম চপ, চিকেন চপ, চিকন রেশমি কাবাব, ছোলাভুনা, চিকেন শর্মা, রেশমি জিলাপী, দই বড়া, ফিরনি। আমি বিক্রেতাকে বললাম, সিঙ্গাড়া, আলুর চপ নেই? সব আছে স্যার, কি দেবো বলেন। বললাম, আলু, বেগুন, কাঁচা মরিচের দাম তো কম, তোমরা এত বেশি দাম নিচ্ছো কেন।
এবার দোকানি মুখ খুলল, বললÑ আপনি মনে হয় দেশের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। সয়াবিন তেলসহ অন্যগুলোর দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আমরা কীভাবে দাম কম রাখব। সাধ্যমতো কিছু কিনে চলে এলাম।
সবকিছুর মূল্য দিন দিন বাড়ছে। মূল্য কমার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। নীতিনির্ধারকরাও কিন্তু বসে নেই। তারা খতিয়ে দেখছে ঘাপলা কোথায়। এদিকে সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস। কোনো জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আর কমিয়ে আনা যায় না বা কমে না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। অধিক মূল্যে কিনতে হচ্ছে, সামান্য লাভে বিক্রি করি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তৎপর না হলে কোনো সুফল দেশের মানুষ পাবে না। অপ্রিয় সত্য কথা হলো, মূল্য বৃদ্ধির সংবাদ পেলে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আগেভাগে টনে টনে দ্রব্য গুদামজাত করে অধিক লাভের আশায়। সংবাদ মাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রকাশিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না।
সরকারের পক্ষে সম্ভব সবকিছু করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সর্ষের মধ্যে ভূত রয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে ভূত তাড়ানোর দায়িত্ব কার। সব সমস্যার সমাধানে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে জনসচেতনতা। কয়েকদিন ধরে মাছসহ সুনির্দিষ্ট নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বাজারে দেখা দিয়েছে নানা সংকট।
যেই দিকে যাই শুধুই মূল্য বৃদ্ধির কথা শুনি। বাজারে যান, যানবাহনে চড়েন, কাপড়-চোপড় কিনতে যান-বাজেটে মিলে না। সাধারণ মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। এভাবে আর কতদিন আমাদের ভুগতে হবে জানি না। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, সকল জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্যে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে, তারা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে।
দেশের সাধারণ মানুষ তেমন কিছু চায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেই হলো। কথায় আছে না, ছালাকে ছাড়তে চাইলে, ছালা কিন্তু আমাদের ছাড়ে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ ধরনের বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না ততক্ষণ পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস আমরা ফেলতে পারব না। চিনির মূল্য হঠাৎ এ পর্যায়ে আসেনি, একটু একটু বাড়তে বাড়তে আজ এ অবস্থা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই পারে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।
বায়েজিদ বোস্তামী, চট্টগ্রাম থেকে

×