ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

ভোগান্তি লাখো মুসলিমের

নায়িমা আখতার

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ১২ মার্চ ২০২৫

ভোগান্তি লাখো মুসলিমের

বছরের অন্য সময়গুলোতে যেসব পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে, রমজান এলেই সেগুলোর দাম যেন হঠাৎ বেড়ে যায়। চিনি, ডাল, তেল, ছোলা, খেজুরসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে। অথচ এ সময় সাপ্লাই চেইনে বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না, বরং চাহিদা আগে থেকেই অনুমেয়। তবে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের অতি মুনাফার লোভে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। তারা কৌশলে মজুতদারি করে পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দেয়, ফলে দাম বেড়ে যায়। এই অনৈতিক বাণিজ্যনীতি রমজানের পবিত্রতাকে কলুষিত করে এবং মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে তোলে।
প্রতি বছর রমজান শুরুর আগে সরকারিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দেওয়া হয়, অভিযান চালানো হয়, কিন্তু ফলাফল তেমন দৃশ্যমান হয় না। প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার দুর্নীতির সুযোগে মুনাফাখোরেরা নির্দ্বিধায় তাদের কারসাজি চালিয়ে যায়। সরকারি বিপণন সংস্থাগুলো স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ফলে সাধারণ মানুষকে বাজারের উচ্চমূল্যেই প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হয়।
রমজান হলো আত্মসংযম ও সহমর্মিতার শিক্ষা গ্রহণের মাস। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, এই মাসেই কিছু ব্যবসায়ীর সীমাহীন লোভের কারণে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সীমিত আয়। সবমিলিয়ে রোজাদারদের জন্য এটি এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। রোজা পালনের সঙ্গে জড়িত ইফতার ও সাহ্রীর খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারকেই কৃচ্ছ্রসাধন করতে হয়। এমনকি অনেক দরিদ্র মানুষ প্রয়োজনীয় খাবারও জোগাড় করতে পারে না, যা সমাজে বৈষম্যের এক নির্মম চিত্র তুলে ধরে।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুদদারি রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে, যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে না পারে। সরকারি বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি, যাতে ভোক্তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য মজুদ না করেন।
রমজান সংযমের শিক্ষা দেয়, লোভের নয়। এই মাসের প্রকৃত তাৎপর্য বজায় রাখতে হলে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে।
 
গোপালগঞ্জ থেকে

×