ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হোন

সিদ্দিকা ফেরদৌস তরু

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ১২ মার্চ ২০২৫

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হোন

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের সঙ্গে ভোক্তা তথা জনগণের আর্থিক অসংগতি হলেই মানুষ পড়ে যায় অস্বস্তিতে। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে এই অসংগতি যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন দরিদ্র অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে অশান্তি ক্ষোভের সূচনা করে। আমাদের মতো দেশে একটা রেওয়াজ হয়ে গেছে বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর পবিত্র রমজান এলে তো আর কথাই নেই, প্রত্যেকটি পণ্যের মূল্য তরতর করে ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যায়। সবাই কি চাকরি করে? দেশের বেশিরভাগ মানুষ চাকরি করে না। এমন লাগামহীন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলকেই এই অবস্থা সমাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। অথচ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য কমানোর পক্ষে থাকে সেইখানে আমাদের দেশের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।
রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। এই সময় জনগণ যাতে প্রতিটি পণ্য ন্যায্য মূল্যে পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা কিন্তু সেটা না করে উল্টো লোভী মুনাফাখোররা মুনাফার জন্য মূল্য বৃদ্ধি করে থাকে। তারা ওঁৎ পেতে থাকে রমজানের জন্য। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট। এই মাসে মানুষের চাহিদা একটু বেশি থাকে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা একটি সাধারণ পরিবারে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো  হয়ে উঠে। বর্তমানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। বেড়েছে মাত্রার বাইরে মূল্যাস্ফীতি। সেখানে আমাদের মতো গরিব দেশের জনগণের পক্ষে অধিক মূল্য দিয়ে পণ্যসামগ্রী কেনা সত্যি কষ্টকর। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে পণ্যের ঊর্ধ্বগতি গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো। আর রমজান এলে সেই দ্রব্যমূল্য লাগামহীন ঘোড়ার মতো। দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে না। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিটি জিনিসই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষের ক্রমাগত ব্যয় বাড়ছে আয় বাড়ছে না। করোনা থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই কর্ম হারিয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয়তো কমেনি বরং বেড়েছে। রমজান মাস হুট করে আসে না। একটা নির্দিষ্ট সময় আসে। কাজেই সরকারকে প্রথম থেকেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সরকার খোলাবাজারে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রয় করে সেটা সীমিত না করে সারা বছর চালু রাখতে হবে। তবেই জনগণের জীবন স্বস্তিতে কাটবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের চেয়ে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বেশি।  তারা শক্ত সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে। সরকারকে শক্ত হাতে এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। রমজান মাস মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস। তাই সরকারকে পণ্যের আমদানি বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অসাধু মুনাফালোভীরা যাতে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিতে না পারে তার জন্য কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। তারা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। তাই রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

 গাইবান্ধা থেকে

×