
নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে নারী দিবসে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। অন্তত ১২ ধরনের রোগ আছে, যা শুধু নারীকে আক্রান্ত করে। তিনটি রোগে আক্রান্ত নারীর হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। কিছু রোগ আছে পুরুষের হয় না, নারীর হয়। শুধু নারীদের হয়, এমন ১২ ধরনের রোগে দেশে প্রায় ৪ কোটি ৩৫ লাখ নারী ভুগছেন। প্রতিবছর এর সঙ্গে আরও কয়েক লাখ নারী যুক্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন তারা। নারীর চিকিৎসা ও সুরক্ষায় পৃথকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও জরুরি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক রোগতাত্ত্বিক পরিস্থিতি নজরদারি ও বিশ্লেষণ করছে আইএইচএমই। তাদের প্রকাশিত গবেষণার তথ্য থেকে বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্যবিষয়ক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) একজন বিজ্ঞানী।
শুধু নারীর হয় এমন রোগ বা সমস্যার তালিকায় আছে মাসিক-পূর্ব শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ, জরায়ুমুখের ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, জননাঙ্গ বের হয়ে আসা, বন্ধ্যত্ব, জরায়ুস্তরের প্রদাহ (এন্ডোমেট্রিওসিস), ডিম্বাশয়ে গোটা, জরায়ুতে গোটা, টার্নান উপসর্গ (জিনজনিত সমস্যা), জরায়ু ও জরায়ুমুখে নির্বিরোধ ক্যান্সার। এ ছাড়া রয়েছে কিছু স্ত্রীরোগ (যোনিপ্রদাহ, জরায়ুমুখের কোষের অস্বাভাবিকতা, শ্রোণি অঞ্চলে প্রদাহ)। শীর্ষ ১০টি রোগের বাইরে মাতৃস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কিছু সমস্যাও আছে। সন্তানধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অনেক নারী স্বাস্থ্য জটিলতায় পড়েন। এর মধ্যে আছে রক্তক্ষরণ, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক রোগ, গর্ভপাত, গর্ভ নষ্ট, নানা ধরনের সংক্রমণ। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ নারী এসব সমস্যায় পড়েন। এতে বছরে চার হাজারের বেশি মায়ের মৃত্যু হয়। মাতৃমৃত্যু নিয়ে আলোচনা হলেও নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা নারীদের নিয়ে আলোচনা ও সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে কথা হয় কম।
নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের আলোচনায় প্রথমেই নারীর প্রতি বৈষম্য কমানোর বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ বৈষম্য দূর করতে রাষ্ট্রীয় নানা উদ্যোগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারী সংস্কার কমিশন এ নিয়ে কাজ করছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কমিশন প্রতিবেদনে নারীস্বাস্থ্যের উন্নতিতে জোরালো সুপারিশ থাকছে। দেশে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চার দশক ধরে কাজ করা সংস্থা বাংলাদেশ উইমেন্স হেলথ কোয়ালিশন বা বিডব্লিউএইচসি বলছে, দেশে এখনো নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ভীষণভাবে অবহেলিত। সন্তান জন্ম দিতে প্রতি ১ লাখে ১৬৫ জন মায়ের মৃত্যু হয়। আগের তুলনায় হার কমলেও মৃত্যু শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়নি। সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীর ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না এখনো। গর্ভবতী মাকে যেন হাসপাতালে নেওয়া পর্যন্ত সব সুবিধা দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া আবশ্যক। নারীর জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল বা ইনস্টিটিউট তৈরি করাও সময়ের দাবি।