ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

নৌযানে পণ্য মজুত

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ১২ মার্চ ২০২৫

নৌযানে পণ্য মজুত

প্রতি বছরের মতো এবারও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে মেতে উঠেছে নিত্যপণ্যের বিপুল মজুত গড়ে তোলাসহ মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছাসহ সর্বাত্মক চেষ্টায় এবার দীর্ঘদিন পর দেশে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে দশ শতাংশের নিচে। নানা পদক্ষেপের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কয়েকটি নিত্য ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক কর কমানো কিংবা প্রত্যাহার করেছে। ব্যবসায়ীদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে কিছু ব্যাংকিং সুবিধাও দিয়েছে। সর্বোপরি বাজারে পর্যাপ্ত নিত্যপণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন শাকসবজির বাম্পার ফলন হওয়ায় এসবের মূল্য কমেছে বহুলাংশে। দেশে আপাতত সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে আছে বলে প্রতীয়মান হয়।
তাই বলে অবৈধ অসাধু ব্যবসায়ী এবং ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের কারসাজিসহ নানাবিধ উপায়ে পণ্য মজুত থেমে নেই। এবারে কিছু ব্যবসায়ী রোজা ও  ঈদকে সামনে রেখে চাহিদাসম্পন্ন কিছু ভোগ্যপণ্যের মজুত গড়ে তুলেছে ভাসমান গুদামে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে নৌযানে পণ্য মজুত রেখে ব্যবসায়ে নেমেছে কিছু ব্যবসায়ী। ঢাকা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে লাইটারেজ জাহাজসহ পণ্যবাহী অন্যান্য নৌযানে তল্লাশি চালিয়ে কিছু ভাসমান গুদামের সন্ধান পেয়েছে কোস্টগার্ড বাহিনী। এ পর্যন্ত এক হাজার ৮৫টি বাণিজ্যিক ও লাইটারেজ জাহাজে চালানো হয়েছে যৌথ অভিযান। ফলে, রমজানে অন্যান্য খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি ভোজ্যতেলের সংকট ও দাম কিছুটা হলেও কমেছে। কোস্টগার্ডের এই অভিযান চলবে নিয়মিত। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খাদ্যসামগ্রী ও ভোজ্যতেলবাহী জাহাজগুলোকে নোঙর এলাকায় ৭২ ঘণ্টার বেশি অবস্থান করতে আরোপ করেছে নিষেধাজ্ঞা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর অন্যতম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ প্রায় দিশাহারা। অধিকাংশ নিত্যপণ্য যেমনÑ চাল, ডাল, তেল, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য বেড়েই চলেছে। অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে হ্রাস পেয়েছে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাও। ফলে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে দেখা দিয়েছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ ও অশান্তি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। বেশি লাভের আশায় দ্রব্যমূল্য মজুত করায় সৃষ্টি হয় সংকট। একশ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। সরকারও বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছে। সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে বিভিন্ন সময় দায়ী করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় কমই। এবার এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অবৈধ উপায়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো স্পষ্টতই অপরাধ। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রয়োজনে অনিয়মের কারণে সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল করা যেতে পারে। খাদ্যপণ্যের দামের কারসাজি রোধে সরকারের কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই কমে এসেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি।

×