ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

টরেন্টোর চিঠি

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি

ড. শামীম আহমেদ

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১১ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:৫২, ১২ মার্চ ২০২৫

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি

মার্ক কার্নি

৯ মার্চ ক্যানাডিয়ানদের জন্য ছিল একটি বিশেষ দিন। এদিন কানাডার লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচনের দিন ছিল, যেখানে লিবারেল পার্টির সদস্যরা ভোট দিয়ে তাদের দলের প্রধান নির্বাচন করেন। প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জাস্টিন ট্রুডো জানুয়ারিতে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিলে এ দিনটি নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত হয়। কানাডার লিবারেল পার্টির প্রায় ৪ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের ভোটে মার্ক কার্নি প্রায় ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে লিবারেল দলের নেতা নির্বাচিত হন।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জাস্টিন ট্রুডো তার পদত্যাগপত্র জমা দিলে কার্নি কানাডার ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। যদিও এটি অত্যন্ত স্বল্প সময়ের প্রধানমন্ত্রিত্ব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেহেতু ট্রুডোর লিবারেল পার্টি গত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, তাই তাদের এনডিপির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হয়েছিল।

কিন্তু ডিসেম্বরে এনডিপি ট্রুডোর সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ট্রুডো আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এরপর দুই সপ্তাহ ট্রুডো অনেক চেষ্টা করলেও দল ও দলের বাইরে কাক্সিক্ষত সমর্থন অর্জন করতে পারেননি। 
এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্যারিফ হুমকি থেকে বাঁচতে নিজের উপ-প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েও তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব রক্ষা করতে পারেননি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় দু’মাসের ক্যাম্পেন শেষে মার্ক কার্নি লিবারেল দলের নতুন নেতা এবং কানাডার ২৪তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন। 
কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয় যখন নেতৃত্বের পদে শূন্যতা আসে। এর পর প্রার্থীদের কিছু যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হয় এবং তারা পার্টির সদস্যদের সমর্থন জোগাড় করে ক্যাম্পেন শুরু করেন। ক্যাম্পেন চলাকালে তারা কানাডার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তাদের নীতির কথা বলেন এবং বিতর্কে অংশ নেন।

নির্বাচনের শেষ পর্যায় হলো ভোটগ্রহণ, যেখানে পার্টির সদস্যরা ব্যালটের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেন। এতে যদি কোন প্রার্থী প্রথম ভোটে ৫০ শতাংশ ভোট না পান, তবে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী বাদ পড়েন এবং তার সমর্থকদের ভোট তাদের দ্বিতীয় পছন্দের প্রার্থীকে দেওয়া হয়। এভাবে আরও কিছু রাউন্ড চলতে থাকে, যতক্ষণ না একজন প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পান। শেষ রাউন্ডে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং তিনি পার্টির নতুন নেতা হন।

লিবারেল পার্টির সদস্য যারা নিবন্ধন করেছেন এবং সদস্যপদ ফি দিয়েছেন, তারাই কেবল ভোট দিতে পারেন। এই সদস্যদের কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এবং তারা চাইলে পার্টির অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। ২০২৫ সালের নির্বাচনে প্রায় ৪ লাখ নিবন্ধিত সদস্য ছিলেন। মার্ক কার্নি ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন প্রথম রাউন্ডেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। এ বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে কার্নি দলীয় প্রধান হলেন এবং খুব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর পদে বসবেন। 
মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে উত্থান এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার আসন্ন ভূমিকা একটি কৌতূহলের বিষয়। তার আর্থিক দক্ষতা, জনসেবার ধরন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে গভীর ধারণার তাকে হঠাৎ করেই পাদপ্রদীপের আলোয় এনেছে। বছরের পর বছর পেশাগত জীবন বিশ্লেষণ করে বলতে পারি যে, তার কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের জগৎ থেকে জাতীয় রাজনীতিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি অসাধারণ এবং অনিবার্য ছিল। কার্নি ফোর্ট স্মিথ, নর্থওয়েস্ট টেরিটরিজে জন্মগ্রহণ করেন।

এরপর তার পরিবার এডমন্টনে চলে আসে, যেখানে তার পিতা ছিলেন একটি স্কুলের অধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে একজন অধ্যাপক। তিনি এমন একটি পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন যেখানে শিক্ষা এবং জনসেবা ছিল অত্যন্ত মূল্যবানÑ যা স্পষ্টতই তার পেশাগত জীবনকে প্রভাবিত করেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স করার পর, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স এবং ১৯৯৫ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

এরপর তার পেশাগত জীবন তাকে বৈশ্বিক অর্থনীতির কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে কার্নি গোল্ডম্যান শ্যাকসে কাজ করেছেন। লন্ডন, টোকিও, নিউইয়র্ক এবং টরন্টোতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি কানাডার ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন এবং ২০০৮ সালে তিনি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি গ্রহণ করেনÑ ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর। বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময় কার্নি তার দক্ষতা প্রমাণ করেছিলেন।

কানাডাকে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন। তার নেতৃত্ব এতটাই প্রশংসিত ছিল যে, ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্য তাকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রথম ব্রিটিশ নয় এমন একজন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে তার কাজ ২০২০ সালে শেষ হলেও, কার্নি অর্থনৈতিক নীতিমালা গঠন করতে থাকেন, বিশেষ করে জলবায়ু অর্থনীতির ক্ষেত্রে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট মোকাবিলায় কাজ করেছিলেন। একই সময়ে তিনি কানাডার সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। ব্যক্তি এবং সরকারি খাতে পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশে তার সিদ্ধান্ত ছিল অনেক দিক থেকে একটি হঠাৎ সিদ্ধান্ত।

যখন জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করেন, লিবারেল পার্টির এমন একজন নেতার প্রয়োজন ছিল যার বিশ্বাসযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চলতে পারার ক্ষমতার ওপর মানুষ ভরসা রাখবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক এই বিপর্যয়ের সময় চিরবন্ধু আমেরিকা যখন ট্রাম্পের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক বৈরী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, তখন তার কথা হঠাৎ করেই আলোচনায় আসে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কার্নি তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন এবং মার্চের মধ্যে তিনি প্রায় ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলেন। সেই হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন মাত্র দুমাসের! 
তার আর্থিক দক্ষতা এবং স্থিতিশীল নেতৃত্বদানের সক্ষমতা তাকে স্পষ্টতই সবার পছন্দের প্রার্থী করে তোলে এমন একটি সময়ে যখন কানাডা জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যার মধ্যে একটি পরিবর্তিত বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির হুমকি।

তার ক্যারিয়ারের বাইরেও, কার্নি একজন পারিবারিক মানুষ, ডায়ানা ফক্সের সঙ্গে বিবাহিত এবং তাদের চার মেয়ে রয়েছে। জীবন তাকে পৃথিবীজুড়ে নিয়ে গেছে, তবে কানাডা সবসময় তার পরিচয়ের কেন্দ্রে ছিল। এখন যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তার নেতৃত্ব নিত্য নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। কিন্তু তার অতীত বিশ্লষণ করে বলা যায় যে, কানাডা সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে দক্ষ এবং কৌশলী নেতার হাতেই যাচ্ছে কানাডা।

মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় বিজয় অবাক হওয়ার মতো বিষয় ছিল না। যেহেতু তাকে পার্টি সদস্যদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সমর্থন দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে দূরবর্তী ৮ শতাংশ ভোটে পরাজিত করেন। যা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, লিবারেলরা নেতৃত্বের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি চাচ্ছিল।

যদিও ফ্রিল্যান্ড সরকারি অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছিলেন, কার্নির খ্যাতি একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ এবং সংকট ব্যবস্থাপক হিসেবে তাকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রেখেছিল, এমন সময়ে যখন কানাডা গুরুতর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে ব্যপক অভিজ্ঞতা তার আর্থিক সংকট মোকাবিলা করার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

তার স্থিতিশীল, বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি পার্টি সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের নেতার প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করেছে। যিনি দেশের ভেতরে এবং বাইরেও আত্মবিশ্বাস পুনর্স্থাপন করতে পারবেন। লিবারেলরা তাকে এমন একজন নেতা হিসেবে দেখছে, যিনি বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক নীতির জটিল বিষয়গুলো বুঝতে পারেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি কানাডার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে পারবেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেতিবাচক বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেও।

তাকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে আর্থিক দায়িত্ববোধ এবং সামাজিক ন্যায়ের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করার দক্ষতা, যা পার্টির জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গুণ ছাড়া তিনি নিজেকে ট্রুডোর উত্তরাধিকারী হিসেবে আলাদা করতে পারতেন না। কখনো কোনো সরকারি পদে আসীন না থাকা সত্ত্বেও, কার্নির অর্থনৈতিক সংকট পরিচালনার রেকর্ড এবং দেশের জন্য একটি পরিষ্কার এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি তাকে স্পষ্টতই বিজয়ী করে তোলে। 
মার্ক কার্নি তার বিজয়ী ভাষণে দেশের অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উদ্বেগের প্রতি দৃঢ় সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি ট্রুডোর বহুল বিতর্কিত কার্বন ট্যাক্স বাতিল করার পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। এটিকে ‘বিভাজনকারী’ এবং বর্তমান অবস্থায় অকার্যকর বলে চিহ্নিত করেন। এই ঘোষণা দেওয়ার সময় তিনি দর্শক সারিতে থাকা ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন।

তখন পরিষ্কারভাবে ট্রুডোর চোখে পরাজয়ের গ্লানি দেখা যাচ্ছিল। কার্বন ট্যাক্স বাতিলের ঘোষণায় লিবারেল পার্টির উপস্থিত সদস্যরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। কার্নি কার্বন ট্যাক্সের পরিবর্তে একটি পরিবেশ বান্ধব প্রণোদনা ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন, যা সকল কানাডিয়ানকে পরিবেশগতভাবে সুরক্ষিত থাকতে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় উৎসাহিত করবে। এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিলেন যে, শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পরিবর্তে টেকসই অর্থনীতির দিকে রূপান্তর চালাতে তার সরকার বেশি মনোযোগী হবে। তার এই অবস্থান জাস্টিন ট্রুডোর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভিন্ন।

২০১৯ সালে ট্রুডোর প্রশাসন কার্বন ট্যাক্স প্রবর্তন করেছিল, যা তাদের জলবায়ু নীতির একটি মূল স্তম্ভ ছিল। এর মূল লক্ষ্য ছিল কার্বন নিঃসরণ কমানো, যেটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে খরচ বাড়িয়ে দেয়। পরিবেশগত উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও, এই ট্যাক্স জীবনযাত্রার খরচ বাড়ানোর জন্য সমালোচিত হয়েছিল এবং সাধারণ কানাডিয়ানদের ওপর আর্থিক বোঝা হিসেবে দেখা হয়েছিল।

কার্নির এই ট্যাক্স বাতিল করার পদক্ষেপ, প্রণোদনার পক্ষে যাওয়া, একটি কৌশলগত বৈপরীত্য নির্দেশ করে, যা সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে তার গুরুত্বের ইঙ্গিত। 
মাত্র দুই মাস আগে কানাডার রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি বড় পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেলরা নানা জরিপে অনেক পিছিয়ে ছিল। আমিসহ অনেক বিশ্লেষকই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম যে, পিয়েরে পয়লিভরের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি বিপুল আসনে জয়ী হবে। লিবারেলদের পরবর্তী নির্বাচনে হারা প্রায় অনিবার্য মনে হচ্ছিল। তবে ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা এবং মার্ক কার্নির উত্থান দ্রুত পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পোলগুলোতে গতি পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায় এবং লিবারেলরা আবার শক্তিশালী হতে শুরু করে। সাম্প্রতিক অ্যাঙ্গাস রিডের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ ২০২৫ এর শুরুর দিকে লিবারেলরা এখন ৩৭ শতাংশ ভোট পাচ্ছে, কনজারভেটিভরা ৩০ শতাংশে রয়েছে এবং এনডিপি আছে ২০ শতাংশে। ইপসোস এবং লেজারও একই ধরনের প্রবণতা দেখাচ্ছে, যেখানে লিবারেলরা ৩৫-৩৭ শতাংশ এর মধ্যে ভোট পাচ্ছে এবং কনজারভেটিভদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমছে। এ পরিবর্তনটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গত তিন বছর ধরে কনজারভেটিভরা ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে ছিল।

মার্ক কার্নির নেতৃত্ব, যা তার দক্ষতা এবং জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানোর জন্য প্রশংসিত, লিবারেলদের নতুন শক্তি এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। যা অনেক ভোটারের কাছে আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। যদিও কনজারভেটিভরা এখনো বেশিরভাগ জরিপে এগিয়ে রয়েছে, কিন্তু কার্নির নেতৃত্বে লিবারেলরা একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হিসেবে ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে।

অনেকে বলছেন, দলীয় নির্বাচনে জেতা এবং জাতীয় নির্বাচনে জেতা ভিন্ন ব্যাপার, বিশেষত যেখানে রক্ষণশীল দলের নেতা পলিয়েভ একজন জাত রাজনীতিবিদ, সেখানে তিনি দিনের শেষে ঠিকই বাজিমাত করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত কার্নির নেতৃত্বের প্রতি জনসমর্থের এই জোয়ার যদি অব্যাহত থাকে, তবে এটি সম্ভব যে কার্নির লিবারেল আগামী নির্বাচনে পয়লিভরের কনজারভেটিভকে পিছনে ফেলেও দিতে পারে। 
মার্চ ১০, ২০২৫
[email protected]

×