
সম্পাদকীয়
অনিয়ম ও অরাজকতা পিছু ছাড়ছে না ২০২৫-এ এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫-১৬ লাখ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। চলতি বছর প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। ২৪ মাসের শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৬ মাসেই শেষ হয় কলেজ জীবন। কিন্তু দু’বছরের পুরো বেতন দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২৪ মাসের বেতন আদায় করতে পারবে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন। কিন্তু অধিকাংশ কলেজ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করছে। বাংলাদেশে করোনা পরবর্তী শিক্ষা বর্ষপঞ্জিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসছে শিক্ষার্থীরা। ফলে ১৬-১৮ মাসেই কলেজ জীবন শেষ।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর পুরনো নির্দেশনার অজুহাতে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ২৪ মাসের বেতন আদায় করছে দেশের কলেজগুলো। কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও শোনা যায়, অনেক শিক্ষার্থীকে টেস্টে ফেল করিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ফলে বেতন দেওয়ার পরও জরিমানা গুনে ফরম পূরণ করতে হচ্ছে। এমন নানা নিয়মের বেড়াজালে পড়েছে চলতি বছরের প্রায় ১৫ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সংকট উত্তরণে শিক্ষা বোর্ড কোনো ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছে না।
উল্টো শিক্ষা বোর্ডের কর্তারা কলেজের অনিয়মের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তারা বলছে, ২৪ মাসের বেতন নেওয়া পুরনো রীতি। কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় চলে। তাদের তো বছরের ১২ মাসই শিক্ষকদের বেতন দিতে হয়। তাদেরও আয়ের প্রয়োজন আছে। এমন যুক্তি অযৌক্তিক। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য অশোভন।
অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বেতন পরিশোধ না করলে ফরম পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এক মাসের বেতন কম হলেও পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে দিচ্ছে না কলেজগুলো। একসঙ্গে সাত মাসের বেতন দিতে গিয়ে অভিভাবকদের হিমশিম অবস্থা। হঠাৎ করে শিক্ষা বোর্ডের এমন নির্দেশনায় প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। শিক্ষা বোর্ডের এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তের যখন ত্রাহি দশা, এমন সময় ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় চরম বৈষম্যপূর্ণ আচরণ। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬টি বোনাস দেওয়া এ দেশের গরিব মানুষের সঙ্গে তামাশা করার শামিল। এটি চরম মাত্রার অন্যায্যতা, যা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অরাজকতা যেন থামছেই না। পাবলিক পরীক্ষায় ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য এবং কথিত উন্নয়নের নামে অর্থ লোপাট চলছেই। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে ঝামেলার আঁচড় কমবেশি লাগেনি। এই অপসংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সম্পদ।
এখানেই সন্তানরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের দীক্ষা নিচ্ছে ও নেবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলতে সকলকে বাধ্য করতে হবে সরকারকে। জনবান্ধব শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা বাঁচলে এগিয়ে যাবে দেশ।