
সম্পাদকীয়
সোমবারে জনকণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ছিল- দেশজুড়ে বিক্ষোভ : ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি। গত এক সপ্তাহ ধরেই সারাদেশের কোথাও না কোথাও নারীরা সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভ করছেন কন্যাশিশুর ওপর যৌন নিপীড়ন এবং নারীর স্বাধীন চলাফেরায় বাধাদান ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। এই বিক্ষোভকে আমরা বিচারহীনতার প্রতিক্রিয়া হিসেবেও বিবেচনা করতে পারি। তাই ধর্ষণ- নিপীড়নের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠেছেন।
তবে এই সরব প্রতিবাদ কি শুধু নারীর? তা নয়। পুরুষদেরও এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়া চাই। নারীর ক্ষোভ-বিক্ষোভ সমাজ ও রাষ্ট্রকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। দেশে নানা পেশায় যেমন নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে. তেমনি যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে তার অভিযোগ করার সুযোগও সহজ হয়েছে। এক বিবেচনায় এটি সামাজিক অগ্রগতি। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ নারী এখনো যৌন সহিংসতার শিকার।
এসব নারী জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও একান্ত সঙ্গী অথবা সঙ্গী নন-এমন কারও কাছ থেকে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নারী তাদের পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই তরুণীকে পিটিয়ে আহত করা, পোশাক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর হেনস্তা হওয়া, অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করায় বাকেরগঞ্জে এক নারীকে প্রকাশ্যে মারধর করার ঘটনাগুলো খুবই উদ্বেগজনক। এসব ঘটনায় রাষ্ট্র ও সরকারের দিক থেকে যে রকম কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, সেটা দৃশ্যমান হচ্ছে না।
গত সপ্তাহে মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আট বছরের শিশুটি যেভাবে পাশবিক ধর্ষণের শিকার হলো, তা সমাজের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে বললেও কম বলা হয়। একটি শিশু বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে আর এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন বোনেরই শ্বশুর নামের এক পাষণ্ড। কোথায় চলেছে সমাজ!
প্রসঙ্গত, গণপরিবহনে নারীর ওপর নানা উপায়ে যৌন নিপীড়ন চলে, এটি আমরা কমবেশি জানলেও প্রায়ই নীরবতা অবলম্বন করে থাকি। বাস-মিনিবাসে প্রতি বছরই ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারীরা, এটি একটি অশুভ বাস্তবতা। সতর্ক ও সচেতন না হলে এটি বিষফোঁড়ার মতো বিস্তার লাভ করার আশঙ্কা। এখানে গণপরিবহন বলতে শুধু বাস- মিনিবাসের যাত্রী বোঝানো হয়নি। একইসঙ্গে ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিংকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গণপরিবহনে ৬৩ শতাংশ নারীই হয়রানির শিকার হন।
যৌন হয়রানির শিকার হন ৪৭ শতাংশ নারী। এর অর্থ হলো দুজন নারীযাত্রীর মধ্যে একজনই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। সত্যপ্রকাশের দায়বোধ থেকে বলতেই হবে বিগত কয়েক মাস ধরে নারীর ওপর ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন চলছে। যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো। মানসিকতার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত পুরুষের হাতে নারী নিগ্রহ চলতেই থাকবে।
তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। কমতে পারে নারীর প্রতি শারীরিক ও যৌন সহিংসতা। মাগুরার ঘটনায় ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার (শিশুটি ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগে মামলা) তদন্ত ও অভিযোগ আমলে নেওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আইন নিজস্ব গতিতে চললে উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় না। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন।