ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিক দায়বদ্ধতা

খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল

প্রকাশিত: ২০:২৫, ১১ মার্চ ২০২৫

ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিক দায়বদ্ধতা

ধর্ষণ একটি জটিল গুরুতর সামাজিক ব্যাধি এটি শুধু ব্যক্তির ওপর নিপীড়ন নয় বরং পুরো সমাজের ওপর আঘাত ধর্ষণ মানুষের মৌলিক অধিকার সম্মান ভয়াবহভাবে লঙ্ঘন করে ইদানীং দেশে আশঙ্কাজনক হারে ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

শিশু থেকে ষাটোর্ধ্ব জননী কেউ হায়েনাদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাম্প্রতিক সময়ে পত্রিকায় উঠে আসছে ধর্ষণের বীভৎস চিত্র ধর্ষণের ভয়াবহতায় মানুষ আঁতকে উঠছে ধর্ষণের ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, নারী পারিবারিকভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে

একা একা বাইরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চারদিকে এমন বিভীষিকাময় অসহিষ্ণু অবস্থা দেখে যে কেউ আতংকিত হতে পারে ধর্ষণকারী শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, অনেক সময় এসিড নিক্ষেপ ধর্ষণের পর ভুক্তভোগীকে নৃশংসভাবে হত্যা পর্যন্ত করছে

একের পর এক নৃশংস ঘটনা প্রমান করে, আমাদের সমাজে নারীর নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ যেন সবসময় একটি অদৃশ্য ভয় কাজ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো সচেতন অভিভাবক তার সন্তানকে নিয়ে অজানা আশঙ্কায় দিনপাত করছেন

এটি শুধু যে আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা তেমনটা নয়, বরং নৈতিকতার চরম অবক্ষয় আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা দেশে ধর্ষণ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে মোট ৪০১ জন নারী

তাদের মধ্যে ধর্ষণপরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৪ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন জন

ধর্ষণকে আমাদের সমাজে অনেক সময় হালকাভাবে নেওয়া হয়, যা অপরাধীদের অপরাধের দিকে ধাবিত করে নৈতিক মূল্যবোধ বিনষ্ট সামাজিক অবক্ষয় ধর্ষণের জন্য হায়েনাদের ৎসাহিত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ধর্ষণের ভয়াবহতা বৃদ্ধিতে সহায়ক

নারীদের খোলামেলা আবেদনময়ী পোশাক এবং নারীদের সচেতনতার অভাব হায়েনাদের আকৃষ্ট করে কিশোর বয়সে অবৈধ প্রেম পরকীয়া নারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে, যা যৌন হয়রানির অন্যতম কারণ

অনলাইনের যৌন সুড়সুড়ি জাগানিয়া সংলাপ বা দৃশ্য নারী নিরাপত্তাহীনতাকে প্রভাবিত করে মাদকাসক্ত মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত পুরুষ অধিকাংশ সময় ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজে পা বাড়ায় বিকৃত যৌন আগ্রহ ধর্ষণের দিকে ধাবিত করে

একাকিত্ব বিচ্ছিন্নতা ধর্ষণের মতো অপকর্ম করতে ৎসাহিত করে ধর্ষণের বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রতা নানা জটিলতা পৈশাচিক কাজকে উস্কে দিচ্ছে পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশ্বায়নের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণেও ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার অনেকেই মনে করেন কর্তৃত্বমূলক চিন্তা-চেতনা ধর্ষণের জন্য অনেকাংশে দায়ী

ধর্ষণ একটি গভীর সামাজিক সমস্যা এবং আইনের মাধ্যমে পুরোপুরি দমন করা কঠিন তাই ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে ব্যক্তিগত, সমাজিক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে শিশুকাল থেকেই সন্তানদের শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হবে

ধর্ষণ নিয়ে সমাজের বদ্ধমূল ধারণা হলো, এটি ভুক্তভোগী তার পরিবারের জন্য সম্মানহানিকর ফলে অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়েও মুখ খোলেন না এমন ধারণার পরিবর্তন করতে হবে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে

নারী নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন জায়গায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন ধর্ষণের মতো পৈশাচিক আচরণ সমূলে ধ্বংস করতে পারিবারকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে আত্মরক্ষার্থে নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান সময়ের দাবি

সেই সঙ্গে ধর্ষণ প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি প্রয়োজন আইনের শাসন এছাড়াও ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেন পরিচালনা করা যেতে পারে

নারীর প্রতি সহিংসতা নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি এক্ষেত্রে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রত্যাশিত বাস্তবায়ন প্রয়োজন

লেখক : শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ

কুতুবে রব্বানী

×