
রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। আর এ বিষাক্ত বাতাসের অন্যতম কারণ, পুরনো লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির কালো ধোঁয়া, যা প্রতিদিন আমাদের শ্বাসযন্ত্রে প্রবাহিত হচ্ছে। গাড়ির ধোঁয়া, ইট ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত কণা, নির্মাণকাজের ধুলা—সবকিছু মিলিয়ে ঢাকার বাতাস এখন সবচেয়ে বেশি দূষিত।
বিশ্ব বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার একাধিক এলাকা বর্তমানে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানীয়। বিশেষত, শীতকালে ঢাকা প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসে। একিউআই (বায়ু মান সূচক) স্কোর ২০০ ছাড়িয়ে গেলে এটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, এবং ৩০১ থেকে ৫০০ এর মধ্যে স্কোর হলে তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ঢাকায় এই স্কোর প্রায়ই অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে, যা প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
এই দূষণ শুধু নগরবাসীদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই হুমকি নয়, বরং আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অবৈধ ইট ভাটা, ও নিয়মবিহীন নির্মাণকাজ—এসব কারণেই ঢাকার বাতাস এতটা দূষিত হয়েছে। এতে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া সহ নানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ঢাকাবাসী প্রতিদিনই এই বিষাক্ত বাতাসে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার প্রভাব তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে অপরিসীম।
এয়ার ভিজুয়াল ৮ মার্চ, ২০২৩ তারিখে রিপোর্ট করেছে যে, ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর এবং বিশেষজ্ঞরা জনগণকে ঘরের বাইরে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকতে, মাস্ক পরতে, এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়া, দূষণের মূল উৎসগুলির মধ্যে ইট ভাটাগুলি অন্যতম। রাজধানীর আশপাশে অবৈধ ইট ভাটা সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন ছাড়া কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা শহরের বাতাসের পিএম ২.৫ (অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা) মাত্রা বাড়াচ্ছে।
এছাড়া, রাজধানীতে চলাচলকারী পুরনো গাড়ির কালো ধোঁয়া এবং দহনশীল জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি, এবং প্রতিদিন এগুলি বাতাসে বিষাক্ত কণা ছড়াচ্ছে।
এখন সময় এসেছে, ঢাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের। পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে। ইট ভাটার নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণকাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণ, গাড়ির ফিটনেস যাচাই—এসব ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি চালানো অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়া, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মাস্ক পরা, ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখা, এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করা—এইগুলোই হতে পারে পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব।
ঢাকার বাতাসের এই বিষাক্ত অবস্থা যদি তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও জীবনমানের উপর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে। এখনই সময়, একত্রিত হয়ে এই সংকট মোকাবিলা করা, না হলে ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য ভবিষ্যত হবে আরও অন্ধকার।
শিহাব