
বিশ্বের সৌন্দর্য ও আধুনিক নগরীর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। বর্তমানে সভ্যতার মাপকাঠিতে ফ্রান্সের তুলনা হয় না। কী নেই প্যারিসে? জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে ইউনেস্কো অন্যতম। ইউনেস্কোর সদর দফতর প্যারিসে অবস্থিত। ইউনেস্কো ও ইউনেস্কো ক্লাবের আমন্ত্রণে বহুবার প্যারিসে যেতে হয়েছে। প্রতিবারের মতো হোটেলে না উঠে প্যারিসে বসবাসকারী এক বাঙালি ভাই রহুল আমিন আবদুল্লাহর বাসায় ওঠার আনন্দ ছিল প্রভূত। প্যারিসের হোটেল ও জীবনযাত্রা ভীষণ ব্যয়বহুল। প্যারিস নগরী সত্যিই অপূর্ব। এর কোনো জুড়ি নেই বা অন্য কোনো দেশের নগরীর সঙ্গে তুলনা করা বোকামি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শিল্পীর অঙ্কনে উদ্ভাসিত এবং পর্যাপ্ত আলোয় আলোকিত ব্যস্ত নগরী প্যারিসে স্বল্প সময়ের জন্য আসা বা বেড়ানো কোনোটাই পূর্ণতা বয়ে আনে। শুধু প্যারিসে কেন, গোটা ফ্রান্সে দেখা ও জানার কোনো শেষ নেই। প্যারিস নগরীতে ঘুরে বেড়ানোর বহু স্থান রয়েছে, যা লিখে শেষ করা যাবে না। প্যারিসে কেউ এলে আইফেল টাওয়ার, প্যারিস গেট, প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিজি প্যালেস, এনভারস এ মোমার্ত, পার্লামেন্ট হাউজ, লুভর জাদুঘর, নটর ডেম গির্জা, কর্নকড টাওয়ার, গিমে জাদুঘর, নেপোলিয়ানস টম্ব ইত্যাদি না দেখলে জীবনটাই অপূর্ণ থেকে যায়। আইফেল টাওয়ারে না উঠে সম্পূর্ণ প্যারিস শহরটাকে অতি সহজে দেখা সম্ভব নয়। তাই আইফেল টাওয়ারে ওঠা চাই। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইউরোপের দর্শনীয় শহরগুলোর মধ্যে প্যারিস অন্যতম। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার মধ্য যুগের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে ছিল একটি। এখনো প্যারিসের প্রধান শোভা আইফেল টাওয়ার। ১৮৮৯ সালে গুস্তাভ আইফেল টাওয়ার স্থাপন বা নির্মাণ করেন। পুরো টাওয়ার নির্মাণ করতে লোহা বা স্টিলের মোট মেটাল পার্টস বা যন্ত্রাংশ ছিল ১৮ হাজার ৩৮টি। আইফেল টাওয়ারটি চারটি বিশাল লোহার পিলারের ওপর দাঁড়ানো। ২৫০ জন নির্মাণকর্মী বা শ্রমিক দুই বছর পাঁচ মাস ধরে বিরামহীনভাবে নির্মাণকাজ শেষ করতে পেরেছিলেন। রাতে আইফেল টাওয়ারে কয়েক লাখ রঙিন বাতি বারবার তার রঙ বদলায়। পুরো টাওয়ারের গায়ে লাখ লাখ বাতি জ্বলছে। এ দৃশ্য রাতের বেলায় দেখতে কী যে অপূর্ব লাগে, তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো বড়ই দুষ্কর। দূর থেকে আইফেল টাওয়ার দেখতে খুব সরু মনে হলেও আসলে কিন্তু তা অনেক প্রশস্ত ও বিশাল। একই সাথে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার দর্শনার্থী আইফেল টাওয়ারে উঠতে পারেন। প্রতি বছরই আইফেল টাওয়ারে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা এক হাজার ৮১ ফুট সাত ইঞ্চি এবং এর ওজন ১০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। ভ্রমণ বা দেখার জন্য লিফটের সাহায্যে টাওয়ারটির শীর্ষ স্থানে ওঠা যায়। সেখান থেকে প্যারিস নগরীর সৌন্দর্য চমৎকার উপভোগ করা এবং প্রায় ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত শহরটি দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন ব্যস্ততম নগরীর মধ্যে প্যারিস অন্যতম হলেও মাটির নিচে মেট্রো থাকায় রাস্তায় তেমন যানজট না থাকলেও গাড়ি পার্কিংয়ের সংকটে গাড়ির মালিকদের পুলিশের ভয়ে তটস্থ থাকতে দেখা যায়। তবে প্যারিস শহরের পুলিশের ব্যবহার ও ভদ্রতা দেশী-বিদেশী সবার কাছে প্রশংসিত।
রাজধানী প্যারিসের রাস্তায় রাস্তায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার, নাইট ক্লাব ইত্যাদিতে ভরপুর। নগরীর লোকজন বাস্তবতার জন্য ঘর থেকে বাইরে বা রেস্টুরেন্টে খেতে বেশি পছন্দ করে। বন্ধের দিন শনি ও রবিবার বাসায় বেশ ধূমধাম বা পার্টির আয়োজন করা হয়। চেনাজানা না থাকলেও প্যারিস নগরীতে ম্যাপ নিয়ে চলাফেরা করা অতি সহজ। তবে নতুন হলে কোনো বাংলাদেশী পরিচিত কাউকে নিয়ে প্যারিস শহর ঘুরে বেড়ানো আনন্দময় এবং সহজ হয়। ফ্রান্সে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই তেমন নেই। ঐতিহাসিক সিন নদীর ওপর দিয়ে প্যারিস নগরীর চারদিকে টুরিস্ট বোট দিয়ে ভ্রমণ করা অতি মনোমুগ্ধকর, যা সত্যিই অকল্পনীয়। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি জনসংখ্যা-অধ্যুষিত ফ্রান্সের রাজধানীতে মাত্র ১০ লাখ লোকের বসবাস। প্যারিস শহর স্বল্প অর্থে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আরিয়ার (ট্রেন) মেট্রোর সুব্যবস্থা রয়েছে। সারা ফ্রান্সে প্রায় এক হাজার মসজিদ খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই সরকার অনুমোদিত নয়। প্যারিস শহরটা চমৎকার এবং মনে হয় ছবির মতো সাজানো-গোছানো শৃঙ্খলা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্যারিসে সহজে কেউ আইন ভঙ্গ করে না। দেশটিতে মরক্কো, আলজেরিয়ান, আফ্রিকান লোকজন বেশি। ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশী লোকের সংখ্যাও একেবারে নগণ্য নয়।
ফরাসিরা ফুলকে ভালোবাসে বলে আপনজনের বিয়ে, জন্ম ও মৃত্যুতে ফুল উপহার দিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করে থাকেন। প্যারিসে প্রতিদিন প্রচুর ফুল বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্যারিসে যেকোনো জিনিসের দাম অত্যন্ত বেশি। তারপরও ফ্রান্সের পারফিউম বিশ্ববিখ্যাত। কোনো সময়ই প্যারিস সফরে এসে আইফেল টাওয়ারে উঠতে এবং সেখানকার খ্যাতনামা পারফিউম কিনতে ভুল করবেন না কেউ।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী