
এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় দেশের বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ইউনিটগুলো করজালের বাইরে থাকছে। এমনিতেই দেশের ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে রাষ্ট্রকে কর ফাঁকি দেওয়ার এক ধরনের প্রবণতা বিদ্যমান। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করতে এ অপসংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অটোমেশন পদ্ধতি চালু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিআইএন নম্বর যুক্ত করে দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর আদায় সহজ হবে। তৎক্ষণাৎ রিটার্ন দেখা যাবে। বাড়তি জনশক্তির প্রয়োজন হবে না। শুধু প্রাযুক্তিক দক্ষতা বাড়ালেই চলবে।
বাংলাদেশে ভ্যাট চালুর ইতিহাসে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে দেশজুড়ে প্রলয়ঙ্করী বন্যার পর দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নে কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয় আইএমএফের কাছে। সংস্থাটির পরামর্শে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশে ভ্যাট বা মূসক চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৯১ সালের ১ জুলাই থেকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট চালু হয়। প্রথমে অল্প কিছু পণ্যের ওপর মূসক আরোপ করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে অধিকাংশ পণ্য এবং কিছু সেবা-পরিষেবা, আমদানি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়কৃত পণ্যে মূসক আরোপ করা হয়। বর্তমানে দেশের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় উৎস এই ভ্যাট প্রথা। অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন মূসক চালুর সিদ্ধান্ত রাজস্ব আয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভ্যাট বা মূসক হলো কোনো ক্রেতা যখন কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করেন, পণ্যমূল্যের অতিরিক্ত যে টাকাটা তিনি পরিশোধ করেনÑ সেটাই হলো মূল্য সংযোজন কর। কোনো পণ্য বা সেবার সর্বশেষ ক্রেতাই হলেন মূসকদাতা। দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অনেক পুরানো অভিযোগ রয়েছে। তারা ক্রেতা সাধারণের কাছ থেকে মূসক আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেন না। ভ্যাট বা মূসক হলো একটি পরোক্ষ কর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে, গোটা দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এক কোটি ১৮ লাখের বেশি। প্রায় ৬৩ লাখ রয়েছে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট।
দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার বিপরীতে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ শতাংশের কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দেয়। এনবিআরের কাঠামোগত দুর্বলতায় ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ব্যবসায়ীদের নানামুখী অসহযোগিতার কারণেও ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। রাজস্ব বাড়াতে এনবিআর কিছু সেবায় ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন কখনো রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ছাড়া সম্ভব নয়। সে অবস্থায় এনবিআরকে আরও আধুনিক স্মার্ট ও ডিজিটাল হওয়ার বিকল্প নেই।