ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ১০ মার্চ ২০২৫

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

রাজধানী ঢাকার অবস্থান ভূকম্পনপ্রবণ এলাকায়। সাম্প্রতিককালে প্রায়ই ভূমিকম্প, যদিও তা মৃদু ও ক্ষণস্থায়ী, অনুভূত হচ্ছে। একদিকে পাহাড় ও চা-বাগান পরিবেষ্টিত সিলেট, অন্যদিকে প্রাকৃতিক অরণ্য ও পাহাড় অধ্যুষিত পার্বত্যাঞ্চলÑ দুটোরই অবস্থান ভূকম্পনপ্রবণ টেকটোনিক প্লেটের ওপর। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারেও প্রায়ই ছোটখাটো ভূমিকম্প হচ্ছে। বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়াসহ প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতদঞ্চলে যে কোনো সময় মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হতে পারে। অথচ ভূমিকম্প মোকাবিলা এবং প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য আমাদের আদৌ কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। বাস্তবে এমন আশঙ্কাকে ভ্রƒকুটি করে রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যত্র একের পর এক বহুতল ভবন, সুপারশপ, সুপারমল, বহুজাতিক কোম্পানির সুদৃশ্য ও মনোরম অফিস সর্বোপরি আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হচ্ছেÑ যেগুলো চলমান।
ভূকম্পনের পাশাপাশি আরও একটি দিক থেকে রাজধানী ঢাকা রয়েছে সমূহ ঝুঁকির মধ্যে। আর সেটি হলো অগ্নিকাণ্ড। সম্প্রতি ভাটারায় ৬তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক হোটেলে আগুন লাগে। ফলে, হোটেলে অবস্থানরত ৪ জন সরাসরি অগ্নিকাণ্ডে নয়, বরং তজ্জনিত সৃষ্ট ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মারা যান। ভবনটিতে আদৌ কোনো অগ্নিনির্বাপণ এবং ফায়ার এক্সিট ছিল না। তদুপরি ভবনটি নির্মাণে রাজউক অনুমোদিত বিল্ডিং কোডও মানা হয়নি। অনুরূপ ঘটেছে ২০১৯ সালের মার্চে বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ার, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ও অন্যান্য ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। এসব অগ্নিকাণ্ডে জীবনহানিসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। যেটি দুঃখজনক তা হলো, প্রায় সর্বত্রই একই ধরনের ঝুঁকি ও দুর্বলতা দৃশ্যমান। যে কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। কোনো ভবনই রাজউকের বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা  হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের কোনো অনুমোদনও ছিল না। সর্বোপরি নির্মাণ কাজে রয়েছে নানা ত্রুটি। শুধু রাজধানীতেই অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ১ হাজার ৮১৮টি ভবন। সারাদেশে রয়েছে ৫ হাজার ৮৬৮টি। এগুলোর মধ্যে ২ হাজার ২২৩টি ভবন সমূহ ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবন পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। ফলে, অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পে জীবনহানিসহ বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ড না কমে বছরের পর বছর বেড়ে যাওয়ায় মূল কারণ ভবন নির্মাণের আগে ভবন কোড না মানা, ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালার তোয়াক্কা না করা, ভবনের সাজসজ্জায় অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থের ব্যবহার এবং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা। দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করলেও ফায়ার সেফটি প্ল্যান এবং অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না অধিকাংশ ভবনেÑ জানিয়েছেন ফায়ার বিশেষজ্ঞরা। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে সব ধরনের ভবনে আগুন বা ধোঁয়া শনাক্তকরণ, অগ্নিনির্বাপণ এবং আগুন লাগলে নিরাপদে বহির্গমনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি ভবনে প্রয়োজনীয় ফায়ার এক্সটিংগুইশারের সিলিন্ডার রাখতে হবে এবং এর সঠিক ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার। এ ছাড়াও যে কোনো ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন।

×