ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

বরকতময় রমাদান

মো নাফীজ আহম্মেদ

প্রকাশিত: ১৯:০৬, ১০ মার্চ ২০২৫

বরকতময় রমাদান

রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের অফুরান কল্যাণের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে আবারও উপস্থিত হয়েছে মাহে রমজান। মানুষের ভেতরের পশুত্বকে কবর দিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস মাহে রমজান। মুমিন বান্দার নিকট যা চাক্ষুষ গুপ্তধন।  মাহে রমজান বান্দার জন্য দৈহিক, আত্মিক পরিশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মাস। রমজানের রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্যই হলো মানুষ দুনিয়ার সকল প্রকার অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে  বিরত থেকে নিজেকে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা  হিসেবে তৈরি করবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে ঘোষণা দেন- হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমনি ভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা-১৮৩)
রোজা এমনই এক ইবাদত যা পূর্ববর্তী সকল নবী রাসূলের ওপর ফরজ ছিল। রোজা ফরজ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ ভীতি তৈরি করা, তাকওয়ার শিক্ষা দেওয়া। আর এটিই সেই ইবাদত যার প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দান করবেন। মানুষের জীবন পরিচালনার প্রশিক্ষণের সময় হচ্ছে মাহে রমজান। পবিত্র মাহে রমজানে আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে মানুষ পরবর্তী মাসগুলোতে শয়তানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। মানুষের ইমান যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, শয়তান তখন তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। মানুষের ইমানী শক্তি ব্যাহত হওয়ার কারণে, কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় তখন মানুষ পাপের পথে ধাবিত হয়। তখন পরম দয়ালু আল্লাহ তাদের আত্মশুদ্ধির দিকনির্দেশনা দেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো, বিশুদ্ধ তওবা। হয়তো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দেবেন।’ (সূরা আত-তাহরিম-০৮)
তাওবা এর মাধ্যমে মানুষের হৃদয় বিগলিত হয়। অন্তরে আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি হয়। আর এখান থেকেই শুরু হয় মানুষের আত্মিক পরিবর্তন। আর এই আত্মিক পরিবর্তনের জন্যই মাহে রমজানের আগমন।
মানুষ তাকওয়া অর্জনের প্রথম প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, রোজার বিধান পালনে ভোর রাতে নির্দিষ্ট সময়ে সাহ্রী খায় এবং সারাদিন আল্লাহর বিধি-বিধান পালনার্থে পানাহার ত্যাগ করে ইবাদাত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকে। সময় মতো জামাআতে নামাজ আদায় করে এবং সকল ফাহেশা কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
আবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করে। রাতে নিয়ম মেনে তারাবিহ এর সালাত আদায় করে। কুরআনের বিধিবিধান মানতে রমজানের এ নিয়মতান্ত্রিকতা বছরের অন্য মাসগুলোতে তাকওয়া অবলম্বনে রোজাদারের জন্য রমজান মাস প্রশিক্ষণ কর্মশালা হিসেবে কাজ করে। রমাজানের দীর্ঘ এক মাসের রোজার প্রশিক্ষণ শেষে মানুষ আবার আগের মতো পানাহার করবে ঠিকই কিন্তু বছরের বাকি সময় অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে রমজানের রোজার শিক্ষা স্থায়ীভাবে বিরাজ করবে সবার মাঝে।
সুশৃঙ্খল ও সুন্দর জীবন-যাপন এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে রমজানে মানুষকে কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। মানব জীবনকে সুন্দর, পরিপাটি ও শান্তিময় করার দিক-নির্দেশনা জানার পাশাপাশি মানতে হবে কুরআনের সকল করণীয় বিধি-বিধান।
পরিহার করতে হবে পরকালের সুখ-শান্তি ধ্বংসকারী সকল গোনাহের কাজ। নিষিদ্ধ কাজ পরিহার করে তাকওয়া অর্জনে কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়ন করাই হবে মানব জীবনের একমাত্র করণীয় কাজ।
রমজান হলো উপবাস পালনের মাস। যাতে ধনী লোকেরা অভাবী মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারে। আর এরই মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সহমর্মিতা। কিন্তু আমরা সমাজের দিকে তাকালে ঠিক এর বিপরীত চিত্রই দেখতে পাই। আমরা আমাদের ইফতারকে এত বেশি জাঁকজমক পূর্ণ করি যে, তা কোনো ইবাদত নয় বরং ভোগ বিলাসের আয়োজনে পরিণত হয়।
সহমর্মিতার এ মাসে আমাদের প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, গরিব দুঃখী সকলের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তাদের সাহ্রী ও ইফতারের ব্যবস্থা করা আমাদের ইমানী দায়িত্ব। কেননা, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন- সেই ব্যক্তি পরিপূর্ণ ইমানদার নয়, যে পেট ভরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে। (মুসলিম)
সওম পালনের পাশাপাশি সংযম, সহমর্মিতা, সমবেদনা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করতে হবে। তবেই আমাদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ নিশ্চিত হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে তার বিধি-নিষেধ পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের তৌফিক দিন।


লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

×