
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় বিগত সরকারের অন্যতম একটি উদ্যোগ বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা। অধিক জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ দেশের মানুষকে আরও একটু বেশি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে চালু হয় এ কার্যক্রম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ২০২৩ সালে দুই দফায় ১৮৩টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করে সরকার। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পালাক্রমে কম পয়সায় রোগী দেখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় নির্ধারিত ফি ধরা হয় ৫০০ টাকা। এর মধ্যে অধ্যাপক পাবেন ৪০০ টাকা, ডাক্তারদের সহকারীরা পাবেন ৫০ এবং সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকা। এভাবে সহযোগী অধ্যাপক পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক ২০০ এবং এমবিবিএস বা বিডিএস ও সমমানের চিকিৎসকরা পাবেন ১৫০ টাকা। ডাক্তারদের সহকারীরা পাবেন ২৫ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ ২৫ টাকা। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগ নির্ণয়ের সুবিধাও সংযুক্ত করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ১৮৩টি সরকারি হাসপাতালে ২ লাখ ৩০ হাজার ২৫২ জন সেবা নিয়েছেন। মেডিক্যাল অফিসারের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন ৯০ হাজার ২২৭ জন এবং কনসালট্যান্টের সেবা নিয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৬৮ জন। তাদের চিকিৎসায় ১২ লাখ ২ হাজার ৯২৩টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার হয়েছে ৭ হাজার ৯৪৩টি। চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৭৮৩ জন সেবা নিয়েছেন। ঢাকা বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে বেশি। এ বিভাগে ৬৫ হাজার ৯৮৯ জনের ৪০ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব সেবাগ্রহীতার চিকিৎসা পরামর্শ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা জমা হয়েছে।
দেশের জেলা সদর কিংবা উপজেলা পর্যায়ে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হলেও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নানা সংকটে দুই বছর যেতে না যেতেই অধিকাংশ হাসপাতালে বন্ধ হয়ে গেছে এ সেবা। আবার কোথাও মাত্র দুই থেকে আড়াই মাস চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। বেসরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্রাকটিস করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেøক্সের ডাক্তারদের বক্তব্য, রোগীরা না আসায় এ সেবা বন্ধ হয়েছে। এ বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
রোগীরা নিজ জীবনের নিরাপত্তায় হাসপাতালমুখী হবেন এমনটিই স্বাভাবিক। চিকিৎসকরা জাতির মেধাবী সন্তান, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতির মেধাবী সন্তানদের গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতিও অসীম দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় সরকার ডাক্তারদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ফলে একেকজন চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন। সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের দায় জনগণের প্রতি কোনো অংশেই কম নয়। যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা দেবেন, নীতিমালা অনুযায়ী তাদের ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই চিকিৎসা ভাতা না পেয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন এ সেবা। অভিযোগ রয়েছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর সরকার পরিবর্তনের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও এ প্রকল্প নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কেন এই নিরুৎসাহ? গরিব দেশের জনগণের গণকল্যাণমুখী কার্যক্রম বন্ধ হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এ সেবা। ফলে বিপাকে পড়েছেন দেশের প্রান্তিক রোগীরা। গরিব রোগীদের সুচিকিৎসার স্বার্থে পুনরায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা যায় কিনা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেটি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখবে বলেই প্রত্যাশা।