ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

নারীর প্রতি সহিংসতা

প্রকাশিত: ২০:১০, ৯ মার্চ ২০২৫

নারীর প্রতি সহিংসতা

সাম্প্রতিককালে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বিদ্বেষ ও সহিংসতা বেড়েছে বহুলাংশে। পথেঘাটে নারীরা এখন এমনকি দিনের বেলায়ও চলতে-ফিরতে ভোগেন নিরাপত্তাহীনতায়। রাস্তাঘাট, ঘরে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন, নিপীড়ন ও হেনস্তার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। সেসব স্থানও পাচ্ছে গণমাধ্যমে। এসবই নারীর মনে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে ভয় ও শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। ১ মার্চ মোহাম্মদপুরে পাবলিক প্লেস বা জনপরিসরে ধূমপানকে কেন্দ্র করে উচ্ছৃঙ্খল জনতা মব সৃষ্টির মাধ্যমে মেরে রক্তাক্ত করে দুই নারীকে। যদিও জনপরিসরে প্রকাশ্যে ধূমপান করলে জরিমানার বিধান রয়েছে, তাই বলে মারধরের অধিকার নেই কারও। ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ওড়না না পরায় হেনস্তা করা হয়। ঐ নারী কর্তৃক অভিযুক্ত করা হয় ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের এক সহকারী বাইন্ডারকে। মেয়েটি মামলা করায় উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তবে অনতিপরেই অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে এবং নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে একটি গোষ্ঠী। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। এর আগে চলন্ত বাসে নারী নিপীড়ন, দুটি এলাকায় নারী ফুটবল দলের খেলা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারীদের ওপর সাইবার হামলার ঘটনাও কম নয়।
জুলাই-আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গত কয়েক মাসে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভ  প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন অব্যাহত থাকার মধ্যেও প্রায় প্রতিদিন ঘটছে নতুন নতুন ঘটনা। এসব অত্যন্ত দুঃখজনক ও পীড়াদায়ক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আবশ্যক।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার সংখ্যা কম। তবে সাম্প্রতিককালে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন-নিপীড়ন ও বিদ্বেষের বেশকিছু ঘটনা জনমনে গভীর শঙ্কা জাগিয়েছে। পুলিশের তথ্যানুযায়ী ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৭১টি। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮৬৭টি মামলা হয়েছে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসব জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী চেতনা ও ছাত্র-জনতার আশা-আকাক্সক্ষার পরিপন্থি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও ইতোমধ্যে নারী অধিকার ও উন্নয়নে বেশকিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ৮ মার্চ ‘অধিকার সমতা ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’- শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সে অবস্থায় সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও কন্যা শিশুর সার্বিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে একান্ত প্রত্যাশা। তা না হলে জনজীবনে শঙ্কা বেড়েই চলবে।

×