
জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার পরিমাণ অর্ধেক কাটছাঁট করার ঘোষণা দিয়েছে। মাথাপিছু রেশন ৬ ডলারে নামিয়েছে তারা, যা আগে ছিল ১২ দশমিক ৫ ডলার। খাদ্য সহায়তা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার চিঠি বুধবার পেয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়। এ সংবাদ রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভয়ানক সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও পাচারের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। এটা পরিষ্কার যে, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার খাবার জোগাতে সামনে আসছে কঠিন সময়। খাদ্য সংকটের তীব্র ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে তারা।
ক্রমবর্ধমান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনীতি, সামাজিক পরিবেশ, কক্সবাজার অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যদিও রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট। বিশ্ব সম্প্রদায়েরই এর দায়ভার বহন করা ছিল যুক্তিযুক্ত। শুধু খাদ্য কিংবা মানবিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ কিংবা ভার লাঘব সম্ভব হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা, মানবিক সহায়তা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রায় দেড় মিলিয়ন রোহিঙ্গা অভিবাসীর চাপে কক্সবাজারের পরিবেশগত ও সামগ্রিক প্রভাব ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এখনই গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদার করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও কোনো বিকল্প নেই।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা তহবিল (ইউএসএআইডি) বাতিলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে রোহিঙ্গাদের ওই খাদ্য সহায়তা কমানোর কথা বলা হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করেনি। বলা দরকার, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার চলমান রোহিঙ্গা খাদ্য সহায়তা ন্যূনতম চাহিদা অনুসরণ করেই নির্ধারিত হয়েছে। সেটি কমানো ন্যায়সংগত নয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষক মহলের পর্যবেক্ষণে আপাতত কোনো সুসংবাদ নেই। রয়েছে কেবলই শঙ্কা। খাদ্য সহায়তার বাজেট অর্ধেকে নেমে আসা রোহিঙ্গা সংকট ঘনীভূত হওয়ারই ইঙ্গিতবাহী। তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো না গেলে পুরো অঞ্চল ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দেওয়া বিচিত্র নয়। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে প্রায়ই ঘটছে খুনাখুনি। মাদক কারবার, চোরাচালান, অপহরণ ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে জড়াচ্ছে নানা গ্রুপ। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের জন্য হয়ে উঠছে বিরাট বোঝা। কক্সবাজার থেকে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। পরিচয় গোপন করে নিচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট। দিন যত যাচ্ছে, ততই ভারী হচ্ছে রোহিঙ্গা বোঝা। এখন ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ হয়ে উঠছে বাজেট সংকট। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের জোরালো পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছে মানুষ। আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও নতুন করে বিশ^ নেতাদের সামনে আনা চাই।