
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে দেশে প্রায়ই ‘মব জাস্টিস’ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছ ফেলে হচ্ছে ডাকাতি। বাসা-বাড়িতে ঢুকে নানা রকম সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে। বাসা-বাড়িতে অভিযানের নামে লুটপাটের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সতর্ক করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কোনো অভিযান চালানোর এখতিয়ার কারও নেই। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তৎপর। মব জাস্টিসের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে জনগণ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেলে বাহিনী দিয়ে সবসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কোনো কোনো স্থানে পুলিশের ওপরও হামলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা কাম্য।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু কার্যক্রম চালু হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলছে ‘সমন্বিত’ অভিযান। ঢাকা শহরের আশপাশে বিশেষ করে টঙ্গী, বছিলা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। ছিনতাই, ডাকাতি, কিশোর গ্যাং ও অন্যান্য অপরাধপ্রবণ স্থানগুলোতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করে পদক্ষেপ নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মিথ্যা, গুজব ও প্রোপাগান্ডার বিপরীতে সত্য তথ্য প্রচারে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভোর ও গভীর রাতে ঝটিকা সফরে থানা, চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন। আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত প্রতিটি ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দেশের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার সমন্বিতভাবে কাজ করতে বদ্ধপরিকর। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার অন্যতম দাবি সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান। এই বৈষম্য দূর করা সম্ভব আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। সম্প্রতি কোথাও কোথাও গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের মব জাস্টিস কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া চাই। কেউ অন্যায় করলে বা অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তির বিচারের বিধান রয়েছে। কাজেই কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং গণপিটুনির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশের সকল সচেতন নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন। তা না হলে জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ পরেই আসছে ঈদ। ঈদের যাত্রাপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চাঁদাবাজি ও ছিনতাই রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।