ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

নারী শক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি—বেগম খালেদা জিয়া

মাহবুব নাহিদ 

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৮ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৭, ৮ মার্চ ২০২৫

নারী শক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি—বেগম খালেদা জিয়া

ছবি: প্রতীকী

“ কোনোকালে একা হয় নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারি; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী ”


নারী রাধে, নারী চুল বাধে, নারী আদরে আগলে রাখে আমাদের, নারী আমাদের পৃথিবীর পথ দেখায়। নারী আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, পথের দিশা দেখায়। নারী কড়াইয়ের হাতা ধরে, সেই নারী ধরে সংসারের হাল কিংবা দেশেরও, নারী স্লোগান দেয়, মিছিলে রাজপথ কাঁপায়। লৌহ মানবী হয়ে মার্গারেট থ্যাচার, টর্চলাইট হাতে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, মানবতার সুরেলা কণ্ঠে মাদার তেরেসা কিংবা অস্ত্র হাতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, নারী শিক্ষার সংগ্রামে বেগম রোকেয়া এবং আমাদের খুব কাছে, অত্যন্ত প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের নারী সংগ্রামের অবিকল্প সারথীর নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যাকে কখনোই ছুঁতে পারেনি ভয়, আপস কিংবা অনিয়ম। জীবনকে প্রজ্ঞা ও আপসহীনতার সমান্তরাল রেখায় চালিয়ে গেছেন তিনি।


কত শত ষড়যন্ত্র, কত নির্যাতন, কত মিথ্যা মামলা আর সাজা! পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, সন্তানদের ওপর অকথ্য নির্যাতন—কিন্তু তবুও কি তাঁকে দমিয়ে রাখা গেছে? ওরা ভেবেছিল, বেগম খালেদা জিয়া হারিয়ে যাবেন, ইতিহাস থেকে মুছে যাবেন। কিন্তু ওরা জানতো না, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের অধিকার আদায়ে, তাঁকে কি এত সহজে ভোলা যায়? তিনি আছেন মানুষের হৃদয়ে, বুক পকেটে, মন পকেটে। আজ নারী দিবসে, এমন একজন সংগ্রামী নারীকে সম্মান না জানালে, এই দিবসই ব্যর্থ হয়ে যায়!


ওরা চেয়েছিল, তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। ওরা ভেবেছিল, ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে দমিয়ে রাখবে। কিন্তু গণতন্ত্রের লড়াই কি কখনো থামে? বালির ট্রাকে আটকে গেছে ভোটাধিকার, অথচ তাঁর সংগ্রাম থামেনি। স্বৈরশাসনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, নিজের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েও তিনি মাথা নত করেননি। তিনি জানতেন, এ লড়াই কঠিন, কিন্তু পথ ছেড়ে দেওয়া তাঁর স্বভাব নয়।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন এক নেতা—দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে একসঙ্গে পাঁচটি আসনে জয়ী হয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন, জনগণ তাঁর পাশে আছে। শত নির্যাতন, কারাবাস, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা—কোনো কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। ২০১৮ সালে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল তাঁকে, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, তাঁর মনোবল ভাঙেনি। কারণ, সত্য কখনো পরাজিত হয় না, সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না।

তাঁর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (CHRIO) তাঁকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ উপাধিতে ভূষিত করে। এর আগে, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি স্টেট সিনেট তাঁকে ‘ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করে। একজন নারী নেত্রী হিসেবে গণতন্ত্রের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ বিশ্বে বিরল। আজ নারী দিবসে, বাংলাদেশ তথা বিশ্ব রাজনীতির এক সাহসী নারীর প্রতি রইল শ্রদ্ধা—যিনি শুধু একটি নাম নন, তিনি এক ইতিহাস, এক আদর্শ, এক গণতন্ত্রের প্রতীক!

রাজনীতিতে তিনি শুধু নেতৃত্ব দেননি, নারীদের ক্ষমতায়নের পথও তৈরি করেছেন। তাঁর সরকার মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা চালু করেছে, উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য "খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা" কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। নারী উচ্চশিক্ষা ও প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে "এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন" প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা এবং নারীদের জন্য কারিগরি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি।

নারীদের উন্নয়নে তিনি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। ধর্ষণ ও অ্যাসিড সন্ত্রাস দমন আইন, যৌতুকবিরোধী আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন—এসবই তাঁর নেওয়া কঠোর ব্যবস্থা। দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে ক্ষুদ্র ঋণ ও নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীদের এগিয়ে নিতে "উইস্টার"-এর মতো নারী বিজ্ঞানী সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন, নারীদের জন্য কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।

ওরা ভেবেছিল, তাঁকে নিঃশেষ করে দেবে। কিন্তু ওরা জানতো না, ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয় তাঁদের নাম, যাঁরা ত্যাগ স্বীকার করেন, সংগ্রাম করেন, মাথা নত করেন না। বেগম খালেদা জিয়া শুধু এক নাম নয়, তিনি এক প্রতীক—তিনি গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি, তিনি বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রার অগ্নিশিখা। তাঁর লড়াই একদিন মানুষের মনে নতুন করে জাগরণ তৈরি করবে, ঠিক যেমনটি ইতিহাসে সত্যের জয় সবসময় হয়!


যারা দেশনেত্রীকে ভালোবাসেন তাঁরা আজও গল্প করতে পারেন, জীবনের এতগুলো বছর পার হওয়ার পরে, এত নির্যাতন সহ্য করে তাঁর কথায় কাজে কোনো প্রতিহিংসার লেশমাত্র নেই। বাড়তি কোনো সুবিধা পেতে চান না, আইনি মাধ্যমেই সুবিচার চেয়েছেন। দুই একবার যা কথা বলেছেন তাতে কোনো বিষোদ্‌গারের ছোঁয়া পাইনি। কারণ তিনি আদতে করেন না। যেটা তিনি করেন, সেটা আমাদের জন্য, আমাদের সবার জন্য-অবিরাম সংগ্রাম! তিনি পথ দেখিয়েছেন লড়াইয়ের, মুক্তির সংগ্রামের, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের, সেই পথেই যাবে আমাদের আগামী নারী প্রজন্ম।

লেখক, মাহবুব নাহিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ।

 

সাবরিনা/শহীদ

×