ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

জুলহাসের স্কাই বাইক

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ৬ মার্চ ২০২৫

জুলহাসের স্কাই বাইক

তরুণ উদ্ভাবক জুলহাস মোল্লা বিমান তৈরি করে অবাক করে দিয়েছেন দেশবাসীকে। মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং জনতার উপস্থিতিতে ৪ মার্চ নিজের তৈরি একটি আরসি বিমান আকাশে উড্ডয়ন করে জুলহাস সৃষ্টি করেছেন বিস্ময়। জুলহাস মোল্লার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়। নদী ভাঙনের কারণে বর্তমানে তার পরিবার বসবাস করছে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায়। আট ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম জুলহাস ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন। অর্থাভাবে পড়ালেখা করতে না পেরে ঢাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করছেন চুক্তিভিত্তিক। প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় পাম্প মেশিন, অ্যালুমিনিয়াম ও এসএস দিয়ে ১শ’ কেজি ওজনের বিমানটি তৈরি করেন তিনি। এর গতি পরিমাপে ব্যবহৃত হয়েছে ডিজিটাল মিটার। পেট্রোল অথবা অকটেনে চালিত ইঞ্জিনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক প্রতিভা ছড়িয়ে আছে, যা সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে কাজে লাগছে না। বিশ্বের উন্নত দেশে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিষয় নির্বাচন করা হয় তাদের আগ্রহ এবং পারদর্শিতার ভিত্তিতে। এজন্য সেসব দেশে খুব সহজেই প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের আবিষ্কারকদের জন্ম হয়। যা আমাদের দেশে প্রায় অসম্ভব। এর অন্যতম কারণ শিশুদের ছোট থেকেই শেখানো হয় তুমি হবে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। এ কারণে অনেকেই খেলোয়াড় অথবা কণ্ঠশিল্পী হয়েও দেশের নাম সমুজ্জ্বল করে। তাই সময় এসেছে অভিভাবকদের চিন্তায় পরিবর্তন আনার। সন্তানদের পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমে শুধু চাকরির স্বপ্ন না দেখিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ প্রসারিত করা দরকার।   
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবকে ছাড়িয়ে গেছে বর্তমান যুগের ডিজিটাল বিপ্লব। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ। তরুণরা দেশের যে কোনো পরিবর্তনে  রাখে অপরিসীম ভূমিকা। আজও বাংলাদেশের সব অভূতপূর্ব সৃষ্টির জন্মই দেন তরুণরা। মুক্তিযুদ্ধের সময়, যুদ্ধ-পরবর্তী দেশ গঠন এবং জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানেও তরুণদের ছিল ইতিবাচক ভূমিকা।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। এত বিশালসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের মাত্র সাত শতাংশ কাজ পেতে সক্ষম হন। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বেকারের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ বেকারের যদি আইসিটি সেক্টরে দক্ষ করে তোলা যায়, তাহলে তারা হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণ সমাজের বিকল্প নেই। তাদের সৃজনশীল উদ্ভাবনীশক্তিকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে গবেষণামূলক কাজে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।

×