ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

অরক্ষিত জনপদ

হুমায়ুন আহমেদ নাইম

প্রকাশিত: ২০:১৬, ৫ মার্চ ২০২৫

অরক্ষিত জনপদ

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অপরাধের মাত্রা বেড়েছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে ঘাটতি স্পষ্ট। ক্রমবর্ধমান চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড এবং গ্যাং-সংক্রান্ত সহিংসতা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কেবল দেশের আইনগত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে, বরং সাধারণ মানুষের আস্থা এবং ভরসাকেও ক্ষুণ্ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে শহরের রাস্তাঘাট, দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলÑ সর্বত্রই অপরাধের প্রকোপ বেড়েছে। বাসে, রাস্তায়, এমনকি বাড়ির সামনে পর্যন্ত অপরাধীরা অবাধে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো সময় কোনো ব্যক্তি হতে পারেন হামলার শিকার। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের ঘটনা বেড়ে চলেছে এবং অপরাধীরা সহজেই আইনের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে। এ অবস্থার জন্য দায়ী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অক্ষমতা এবং অপরাধ দমনে প্রশাসনিক দুর্বলতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধী চক্রকে দমন করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং এতে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া জনমনে পুলিশের প্রতি অসন্তোষকে কাজে লাগাচ্ছে অপরাধী চক্র। কিছু পুলিশ কর্মকর্তার জন্য সকল পুলিশ সদস্যকে হেয় করে তাদের অবদমিত করছে। এমনকি দেখা যায়, ছিনতাইকারী ছিনতাই করায় পুলিশ তাকে ধরে ফেললে সেও পুলিশের ওপর হামলা করছে, আর আশপাশের মানুষও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যোগ দিচ্ছে। এ ধরনের অদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য পুলিশের মতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারছে না। ফলে অপরাধীরা আইনের ভয় না পেয়ে আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে। যা দেশ ও জাতির জন্য এক ভয়াবহ বিপদ। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে হলে, প্রথমে অপরাধ দমন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ, দ্রুত বিচার এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ, র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, জনগণের মধ্যে আইন মেনে চলার সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একটি সুশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার যদি কার্যকরী উদ্যোগ নেয়, তবে দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি যে শুধু অপরাধীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছে তা নয়, এটি দেশের অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা এবং জনগণের মনের শান্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক সমস্যা কিংবা অন্য যে কোনো সমস্যাই হোক, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে যেন আমার মা-বোন নিরাপদে চলতে পারে তার জন্য অপরাধের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থান নিতে সমাজের সকলেরই সম্মিলিত প্রয়াস চালানো প্রয়োজন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে

×