
বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংস ছিনতাই, ডাকাতি এবং নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে, যা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে দিনদুপুরে ছিনতাই এবং রাতে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা অহরহ শোনা যাচ্ছে। এ ধরনের সহিংস অপরাধ শুধু ভুক্তভোগীদের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে না বরং সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী নির্যাতনের পরিস্থিতিও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে নারী নির্যাতনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির মতো অপরাধ সমাজের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকর পদক্ষেপ ও কর্তব্যনিষ্ঠা জনমনে স্বস্তি এনে দিতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। অনেক সময় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর যথাসময়ে সাড়া না দেওয়া, অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ধীরগতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দক্ষ, সক্রিয় এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দিয়ে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং অপরাধ প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কেউ অপরাধীকে নিজের হাতে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করলে সামাজিক অস্থিরতা আরও বেড়ে যাবে। তাই অপরাধীকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে সোপর্দ করাই সঠিক পন্থা। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক দলগুলোরও এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অপরাধ প্রবণতা বাড়ায়। তাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সংহতি বজায় রাখতে রাজনৈতিক নেতাদের সঠিক ও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সহনশীলতার মনোভাব গড়ে তুলতে পারলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ এবং প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সমাজের সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুসমন্বয় গড়ে তুলতে পারলে অপরাধ প্রবণতা কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজে বসবাস করতে পারে।
ঢাকা থেকে